৭ ও ৮ সেপ্টেম্বরের রাত বিশ্ববাসীর জন্য নিয়ে আসছে এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ এবং “ব্লাড মুন” পৃথিবীর আকাশে দেখা যাবে। এ সময় পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে পড়বে, ফলে চাঁদের শরীর থেকে লাল-কমলা আভা ছিটকে বেরোবে। বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ আংশিক বা পূর্ণ গ্রহণ প্রত্যক্ষ করতে পারবেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে। এশিয়া ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ জায়গা থেকে পুরোপুরি দেখা যাবে এই গ্রহণ, পাশাপাশি ইউরোপ, আফ্রিকা, পূর্ব অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কিছু অংশ থেকেও আংশিক দৃশ্যমান হবে। ভারতবাসীরা এই মহাজাগতিক বিস্ময় দেখতে পাবেন প্রায় সাত বছর পর। ভারতে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ এবং “রক্তিম চাঁদ” শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই।
গ্রহণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ, যখন চাঁদ সম্পূর্ণভাবে পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যাবে, চলবে পুরো ৮২ মিনিট। সূর্যগ্রহণের মতো এতে চোখের সুরক্ষার জন্য বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন নেই, খালি চোখেই নিরাপদে দেখা যাবে।
ভারতে চন্দ্রগ্রহণের সময়সূচি –
•গ্রহণ শুরু: ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮:৫৮ মিনিট।
•পূর্ণগ্রাস (রক্তিম চাঁদ): ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২:২২ পর্যন্ত
•গ্রহণ শেষ: ৮ সেপ্টেম্বর রাত ২:২৫
ধাপে ধাপে সময়সূচি (IST) –
•রাত ৮:৫৮ (৭ সেপ্টেম্বর): পেনামব্রাল বা ছায়া-গ্রহণ শুরু।
•রাত ৯:৫৭ (৭ সেপ্টেম্বর): আংশিক গ্রহণ শুরু
•রাত ১১:০০ (৭ সেপ্টেম্বর): পূর্ণগ্রাস শুরু (চাঁদ সম্পূর্ণ লাল)
•রাত ১১:৪১ (৭ সেপ্টেম্বর): সম্পূর্ণ গ্রহণ
•রাত ১২:২২ (৮ সেপ্টেম্বর): পূর্ণগ্রাস শেষ
•রাত ১:২৬ (৮ সেপ্টেম্বর): আংশিক গ্রহণ শেষ
•রাত ২:২৫ (৮ সেপ্টেম্বর): ছায়া-গ্রহণ শেষ
ভারতের প্রায় সব জায়গা থেকেই এই গ্রহণ দেখা যাবে, আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ সহ বড় শহরগুলো থেকেও স্পষ্ট দেখা যাবে “ব্লাড মুন”। বিশেষ করে রাত ১১টা থেকে ১২:২২ মিনিট পর্যন্ত সময়টিই হবে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর।
তবে কম আলো ও দূষণমুক্ত এলাকা থেকে দেখলে দৃশ্য আরও স্পষ্ট ও রঙিন হবে। আলোকচিত্রী ও মহাকাশপ্রেমীরা অন্ধকার আকাশে চাঁদের গাঢ় লাল রূপ আরও তীব্রভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
ভারতে পরিষ্কারভাবে চন্দ্রগ্রহণ দেখার, ছবি তোলার ও পরবর্তীকালে তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু স্থান বেছে দিয়েছেন –
১. স্পিতি ভ্যালি, হিমাচল প্রদেশ : পাহাড়ি উচ্চতা থেকে অবাধ দৃশ্য।
২. সারিস্কা, রাজস্থান : খোলা আকাশ ও নিরিবিলি পরিবেশ।
৩. নুব্রা ভ্যালি, লাদাখ : স্বচ্ছ আকাশ ও পাহাড়ি পটভূমি।
৪. মাথেরান, মহারাষ্ট্র : দূষণমুক্ত পাহাড়ি শহর।
৫. কচ্ছের রান, গুজরাত : বিশাল লবণময় প্রান্তর থেকে স্পষ্ট দৃশ্য।
৬. কুর্গ, কর্নাটক : পাহাড় ও সবুজে ঘেরা পরিবেশ।
৭. নীল আইল্যান্ড, আন্দামান ও নিকোবর : সমুদ্রের ওপরে অসাধারণ দৃশ্য।
তবে সেই দিনের স্থানীয় আবহাওয়ার উপর নির্ভর করবে আকাশ পরিষ্কার থাকবে কিনা।
পর্যবেক্ষকদের জন্য পরামর্শ –
•দূরবিন বা টেলিস্কোপ নিলে আরও কাছে দেখা যাবে।
•ক্যামেরা ও ট্রাইপড নিলে বিভিন্ন ধাপ ধারণ করা সম্ভব।
•গরম পোশাক, ভাঁজ করা চেয়ার, পানীয় জল ও খাবার সঙ্গে রাখা ভাল।
•মোবাইল অ্যাপ (যেমন Stellarium বা SkySafari) ব্যবহার করে চাঁদের অবস্থান সহজে খুঁজে নেওয়া যাবে।
এ বছরের এই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সত্যিই এক অনন্য দৃশ্য হবে। আকাশভরা সূর্য তারা দেখে মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকালের বিস্ময়ে যাঁরা হারিয়ে যেতে চান, স্বাভাবিকভাবেই এই সুযোগ তাঁরা মিস করবেন না।