ফের ইউক্রেন আক্রমণ করল রাশিয়া। মুহুর্মুহু ড্রোন ও মিসাইল হানা। আগুন ধরে গেল ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সরকারি ক্যাবিনেট ভবনে। ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া। ধোঁয়ার কুণ্ডলী বহুদূর পর্যন্ত চোখে পড়ছে। তিনজন নিহত। তার মধ্যে রয়েছে এক বছরের শিশুও। পাল্টা আঘাত হেনেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের ‘দ্রুজবা’ তেলের পাইপলাইন ইড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা। বিপুল ক্ষতি। এই প্রতিহামলা গোটা যুদ্ধকে আরও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।
রবিবার গভীর রাতে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিডেঙ্কো নিশ্চিত করেন যে, প্রথমবারের মতো একটি সরকারি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত্রু হামলায়। আমরা ভবনগুলো মেরামত করব, তবে প্রাণহানির ক্ষত পূরণ করা যাবে না। পশ্চিমি দেশগুলোর প্রতি তাঁর আহ্বান, কথার বদলে কঠোর পদক্ষেপ করে রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপাতে হবে।
কিয়েভের পেচেরস্কাই জেলা থেকে উঠে আসছিল কালো ধোঁয়ার স্তম্ভ। মেয়র ভিটালি ক্লিটস্কো জানান, হামলা শুরু হয় ড্রোনের ঢেউ দিয়ে, এরপর মিসাইল আঘাত। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক বছরের শিশু, তরুণী ও বৃদ্ধা, যারা বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গর্ভবতী এক মহিলা আহত হয়েছেন। স্ভিয়াতোশিনস্কাই ও দারনিত্স্কাই এলাকার আবাসিক ভবনগুলোতেও আঘাত হানে রাশিয়া। একাধিক বহুতল আংশিক ধসে পড়ে।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর টকাচেনকো নাগরিক আবাসনে উদ্দেশ্যমূলক আক্রমণের নিন্দা করেন। উসকানি ছাড়াই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যক্কারজনক হামলার অভিযোগ করেন। বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ উস্কানিমূলক পদক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে আরও শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের জন্য মিত্র দেশগুলোর প্রতি আবেদন জানান।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার দ্রুজবা পাইপলাইনে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। ইউক্রেনীয় ড্রোন কমান্ডার রবার্ট ব্রোভদি নিশ্চিত করেন যে, তারা সমুচিত জবাব দিয়েছে। রাশিয়ার পাইপলাইনে বিপুল ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে। দ্রুজবা পাইপলাইন হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া সহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে রাশিয়ার তেল সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ইউক্রেনের এই স্ট্র্যাটেজি গোটা ইউরোপীয় শক্তি-কাঠামোকে লক্ষ্য করেই করা হচ্ছে।
ক্রেমেনচুক শহরে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের অনেক অংশে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। ক্রিভই রিহে রকেট হামলায় পরিবহন ও একাধিক নির্মাণ কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওডেসায় আবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে রাশিয়ান স্টেট মিডিয়া দাবি করেছে যে তারা ৬৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। পোল্যান্ডও এদিকে ফাইটার জেট পাঠিয়ে আকাশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষই সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলার কথা অস্বীকার করলেও দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।