বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ও পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে মানা হয় মিশর সিনাই ( অনেকে বলেন সাইনাই) পাহাড়কে। একযোগে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান সকলের কাছেই শ্রদ্ধার, ভক্তির ও পবিত্রতার স্থান এই পাহাড়। বছরের পর বছর পর্যটকরা বেদুইন গাইডের সঙ্গে এই পাহাড়ে ওঠেন সূর্যোদয় দেখার জন্য বা মরুভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী সেই পাহাড়েই মিশর সরকার ২০২১ সালে শুরু করেছে “গ্রেট ট্রান্সফিগারেশন প্রজেক্ট”। এই প্রকল্পে সেখানে তৈরি হচ্ছে হোটেল, ইকো-লজ, ভিজিটর সেন্টার ইত্যাদি। পাশাপাশি বিমানবন্দর সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। সরকার এটিকে ‘সারা বিশ্ব ও সব ধর্মের জন্য মিশরের উপহার’ হিসেবে প্রচার করলেও সমালোচকদের মতে এর জেরে এখানকার আধ্যাত্মিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
স্থানীয়ভাবে জাবাল মুসা নামে পরিচিত সিনাই পর্বতকে বাইবেল ও কোরানের বর্ণনা অনুযায়ী সেই জায়গা ধরা হয়, যেখানে হযরত মুসা আল্লার কাছ থেকে দশটি আদেশ লাভ করেছিলেন। এখানেই ষষ্ঠ শতকে নির্মিত গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ পরিচালিত সেন্ট ক্যাথরিন মঠ অবস্থিত।এখানে বসবাস করে জেবেলেয়া নামের ঐতিহ্যবাহী বেদুইন গোষ্ঠী। অভিযোগ, ইতিমধ্যেই তাদের বাড়িঘর ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিবির ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রায় বিনা ক্ষতিপূরণে।
ব্রিটিশ ভ্রমণলেখক বেন হফলারের অভিযোগ, এই প্রকল্প স্থানীয়দের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা বাইরের স্বার্থ রক্ষা করছে কিন্তু বেদুইনদের শতাব্দীপ্রাচীন জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করছে।
ইউনেস্কো গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করে মিশরকে উন্নয়নের নামে এই কাজ বন্ধ করতে বললেও তাতে সাড়া মেলেনি। বরং রিপোর্ট অনুযায়ী প্লেন অব এল-রাহা এলাকায়, যেখানে ইজরায়েলিরা মুসার জন্য অপেক্ষা করেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, সেখানেই হচ্ছে বড় বড় রাস্তা তৈরির ও অন্যান্য পরিবর্তনের কাজ। গ্রিস এই প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে সরব, কারণ সেন্ট ক্যাথরিন মঠ তাদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। চলতি বছরের মে মাসে এক মিশরীয় আদালত রায় দিয়ে জানায় যে বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো খ্রিস্টান মঠটি সরকারি জমিতে তৈরি।
