মার্কিন মুলুকের ৫০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্কের ধাক্কায় কোণঠাসা ভারতের চিংড়ি, চামড়া, পোশাক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রীর রফতানি। ক্ষতির ধাক্কা সামাল দিতে গালফ কান্ট্রি তথা উপসাগরীয় অঞ্চল, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারে ঢুঁ মারছেন বাংলার রফতানিকারকরা।
পোশাক রফতানিতে যুক্ত সংস্থাগুলির কর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উপসাগরীয় অঞ্চলকেই এখন টার্গেট করেছেন। আর চামড়া ব্যবসাগুলি খুঁজছে যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজার। বিপাকে পড়েছে চিংড়ি রফতানিকারী সংস্থাগুলি। কারণ তাদের আয়ের ৭৫ শতাংশই এতদিন আসত মার্কিন মুলুক থেকে। সামুদ্রিক পণ্য রফতানির জন্য এবার তারা চিন, জাপান এবং ইউএই-র সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রফতানিকারী সংস্থাগুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে লজিস্টিক পরিষেবা প্রদানকারীরা। তারা মার্কিন আগ্রাসনে মাথা নত না করে, কম লাভের মার্জিনে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বলে দাবি করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অফ মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট অপারেটরস অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি অরুণ কুমার।
রফতানিকারী সংস্থাগুলির ক্রমবর্ধমান ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরস্পরবিরোধী খবর। সেখানকার একটি ফেডারেল আপিল আদালত শুল্ক বৃদ্ধিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। আবার হোয়াইট হাউস তাদের বর্ধিত শুল্কের উপরই অটল রয়েছে।
এশিয়ান লেদার প্রাইভেট লিমিটেডের সিএমডি এবং ইন্দো-জার্মান চেম্বার অফ কমার্সের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান নারি কালওয়ানি জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বিকল্প বাজারগুলিতে তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন, সেখানে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট তথা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং পূর্ব এশীয় দেশগুলিতে রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বলেন, “আমরা ইইউতেও মনোযোগ দিচ্ছি, যার সঙ্গে ভারতের বছরের শেষ নাগাদ এফটিএ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
শহরের বৃহত্তম পোশাক ক্লাস্টারগুলির মধ্যে একটি খিদিরপুরের মেটিয়াবুরুজে। নির্মাতারা উপসাগরীয় অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে বড় বাজি ধরছেন। পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থার এক কর্তা বলেছেন, “আমরা যে পোশাক তৈরি করি, তাতে বেশিরভাগই পলিয়েস্টার থাকে। ইউরোপীয় দেশগুলির চাহিদা বেশিরভাগই সুতির পোশাকের। দুবাই এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় পলিয়েস্টার-ভিত্তিক পোশাকের কোনও সমস্যা নেই।”
ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের জাতীয় টেক্সটাইল কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় জৈনের বক্তব্য, পোশাক রফতানিকারকরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং কোরিয়ার সঙ্গে ভারতের এফটিএ রয়েছে। পোশাকের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এফটিএ কাজও করছে। একবার সবগুলি বাজারে ঢুকতে পারলেই অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।
বছরে বাংলার কমবেশি ৮,০০০ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি রফতানি হয়। সেই রফতানি বাজারের ২০% আসে উপসাগরীয় অঞ্চল, চিন এবং জাপান থেকে। বাকিটা আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সি-ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি রাজর্ষি ব্যানার্জির বক্তব্য, আমেরিকা ছাড়া অন্যান্য দেশে এবার রফতানির পরিমাণ বাড়ানোর সময় এসেছে।
