প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ইস্তফার পর বর্তমানে নেপালের দায়িত্বে সেনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ভার নিলেও তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আমজনতার অভিযোগ, সেনা জওয়ানরা একেবারে নিষ্ক্রিয়। তারা শুধু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সুরক্ষার কাজেই ব্যস্ত। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়ে নেপালের সেনাপ্রধানের সঙ্গে মঙ্গলবার মাঝরাতে আলোচনায় বসেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের দাবিদাওয়া শোনেন সেনাপ্রধান।
ইতিমধ্যেই রাজধানী কাঠমাণ্ডু ও সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে সেনাবাহিনী। নেপাল সরকারের প্রধান সচিবালয় ভবনের নিয়ন্ত্রণ করছে সেনা। সেনা কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, কোথাও লুটপাট চালালে বা ভাঙচুর করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। দেশের নাগরিকদেরও প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করার আর্জি জানিয়েছে তারা।
চলতি অচলাবস্থা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে বুধবার নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। এই বৈঠকে সেনাবাহিনী মধ্যস্থতার ভূমিকা নেবে বলে জানা গিয়েছে।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দখলও নিয়েছে নেপালের সেনাবাহিনী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিক্ষোভকারীরা ত্রিভুবন বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা করছিল। তার পরেই বিমানবন্দর চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী। বর্তমানে বিমানবন্দরের পরিষেবা আংশিক স্থগিত রয়েছে। ইন্ডিগো ও নেপাল এয়ারলাইন্স ইতিমধ্যেই দিল্লি- কাঠমান্ডু বিমান পরিষেবা স্থগিত রেখেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার ৬টি বিমান প্রতিদিন দিল্লি-কাঠমাণ্ডু রুটে চলাচল করে। তবে মঙ্গলবার এয়ার ইন্ডিয়া চারটি বিমান বাতিল করেছিল।
তবে নেপালের সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভকারীরা এখনও এখানে ওখানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালালেও সেনাবাহিনী নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। বুধবারও নেপালের অধিকাংশ রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। পথে ঘাটে খুব একটা লোক দেখা যায়নি। বেশিরভাগ দোকান পাট ছিল বন্ধ। এখনও মানুষের মনে রয়েছে চাপা আতঙ্ক। তবে সকলেই চাইছেন, দেশ দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুক।
নেপালের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করেছে বিদেশমন্ত্রক। এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে ভারতীয়রা কেউ যেন নেপালে না যান। যাঁরা সে দেশে আছেন তাঁদের আপাতত কয়েকদিন ঘরের মধ্যেই থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে নেপালের প্রায় ১৭৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ ও এসএসবির টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জওয়ানের সংখ্যা। গোটা পরিস্থিতির উপর সতর্ক নজর রাখছে বিদেশমন্ত্রক। আন্তর্জাতিক মহলও এই নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সকলেই চাইছে নেপালে দ্রুত শান্তি ফিরুক।
