কয়েক বছর আগেও নেপালে ছিল রাজার শাসন। পরবর্তী সময়ে ওই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণতন্ত্র। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে উঠল দুর্নীতির অভিযোগ। তারপর উত্তাল হল নেপাল। আছড়ে পড়ল তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ।
বর্তমানে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। জনগণের একাংশের দাবি, দেশে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রশ্ন হল নেপালে কেন বা কীভাবে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ হল?
নেপালে রাজতন্ত্রের ভাঙনের সূচনা হয়েছিল ২০০১ সালে।
২০০১ সালের ১লা জুন নেপালের রাজা বীরেন্দ্র ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করা হয়। প্রিন্স দীপেন্দ্র একটি পার্টি চলাকালীন মদ্যপ অবস্থায় রাজা বীরেন্দ্র, রানী ঐশ্বরিয়া এবং তার ছোট দুই ভাইবোন-সহ পরিবারের আট জনকে গুলি করে খুন করেন। এরপর দীপেন্দ্র নিজের মাথায় গুলি করেন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান। এই ভয়াবহ ঘটনা নেপালের ইতিহাসে ‘নেপালি রাজকীয় গণহত্যা’ নামে পরিচিত। এই গণহত্যার পর নেপালের রাজতন্ত্রের কার্যত অবসান ঘটে।
নতুন রাজা হন বীরেন্দ্রর ভাই জ্ঞানেন্দ্র। পাকাপাকিভাবে ২০০৮ সালের মে মাসে নেপাল থেকে রাজতন্ত্র অবলুপ্ত হয়।
প্রশ্ন হল কেন দীপেন্দ্র এভাবে পরিবারের সকলকে মেরে ফেললেন? জানা গিয়েছে, নেপালের এক রাজনীতিবিদের মেয়ে দিব্যানি রানার সঙ্গে ব্রিটেনে পরিচয় হয়েছিল দীপেন্দ্রর। দিব্যানী আদতে গোয়ালিয়রের রাজ পরিবারের বংশোদ্ভূত। কিন্তু দীপেন্দ্র ও দিব্যানীর এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি নেপালের রাজ পরিবার। রানী ঐশ্বরিয়া অন্য এক তরুণীর সঙ্গে দীপেন্দ্রর বিয়ে দিতে মনস্থ করেছিলেন। সে কারণেই পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করেছিলেন দীপেন্দ্র।
অন্যদিকে দিব্যানীর পরিবারও এই বিয়েতে রাজি ছিল না। কারণ তাঁদের ধারণা ছিল, নেপালের রাজ পরিবারের থেকে তাদের বংশমর্যাদা অনেক বেশি। পরিবারের এই আপত্তি নিয়ে দীপেন্দ্র বরাবরই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। ২০০১ সালে বাড়িতে যখন পার্টি হচ্ছিল সেখানেও তিনি মদ্যপ অবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। তারপর আচমকাই গুলি চালান।
মাসখানেক আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি অভিযোগ করেছিলেন, দেশে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে যে বিক্ষোভ হয়েছিল তার পিছনে ইন্ধন জুগিয়ে ছিলেন রাজা জ্ঞানেন্দ্র। চলতি বছরের শুরু থেকেই নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
ওই আন্দোলনকে তীব্র কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী ওলি বলেছিলেন, ‘দেশবাসী যাকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তিনি আবার মানুষকে খেপিয়ে তুলছেন। কারণ তিনি আবার দেশের কর্তৃত্ব হাতে তুলে নিতে চান। নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে তিনি মানুষকে হিংসার দিকে, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তাঁর জন্যই দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে ও জীবনানি ঘটছে। রাজা হওয়ার ইচ্ছা না থাকলে তিনি এই অশান্তির ঘটনায় মুখ খুলতেন।মানুষকে শান্ত হওয়ার আবেদন জানাতেন। কিন্তু তিনি মুখ বুজে রয়েছেন। দেশে বর্তমানে যে অশান্তি ও ঝামেলা হচ্ছে তার জন্য তিনি দায়ী। এর দায় তাঁকেই নিতে হবে।’
Leave a comment
Leave a comment