নেপালে সাম্প্রতিক বিক্ষোভে মৃতদের পরিবারকে বড় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল সরকার। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমেই ঘোষণা করেন, বিক্ষোভে নিহতদের ‘শহিদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং প্রত্যেক পরিবারের হাতে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা।
সুশীলা কার্কি, নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। তাঁকে শুক্রবার শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল। তবে তিনি রবিবার থেকে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিন তিনি রাজধানী কাঠমান্ডুর লায়নচৌরের শহিদ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি যান সিংহ দরবারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে কাজ শুরু করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবন থেকে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। প্রধান সচিব একনারায়ণ আর্যাল জানিয়েছেন, সরকার ১৩৪ জন আহত বিক্ষোভকারী ও ৫৭ জন আহত পুলিশকর্মীর বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত ৭২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন কয়েদি এবং ৩ জন পুলিশ। সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে।
রাষ্ট্রপতি পৌডেল শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি আসন্ন ২০২৬ সালের ৫ মার্চের সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতেই সরকারের সুপারিশে নেপালের নিম্নকক্ষ সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এটাই ছিল জেনারেশন জেড আন্দোলনের অন্যতম দাবি। কারণ আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তুলেছিলেন যে সংসদ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সঠিক সংস্কার করতে অক্ষম।
রাষ্ট্রপতি পৌডেল জানান, সংসদ ভাঙার এই সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও দেশের সংবিধান, সংসদীয় গণতন্ত্র এবং ফেডারেল প্রজাতন্ত্র রক্ষা করার জন্য এটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল।
তবে এই সিদ্ধান্তে নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। শনিবার সংসদের ভাঙা অংশের ৮টি রাজনৈতিক দল যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ সংবিধানের ৭৬ (৭) অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে এবং দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় ও সংবিধানিক রীতি লঙ্ঘন করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের অসাংবিধানিক পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না।
