বাণিজ্যের বালাই বড় বালাই। বিশেষ করে ভারতের মতো বিশাল বাজার যদি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে আপত্তি, সেজন্য ৫০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো, বিশ্বের স্বঘোষিত ‘বস’-এর ধমক চমক শেষ পর্যন্ত কাজে এল না। কারণ ভারত মার্কিন হুঁশিয়ারির সামনে মাথা নত করতে রাজি হয়নি। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে, আগাম শুভেচ্ছা জানালেন জন্মদিনের।
সোমবার রাতে এই ফোন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ট্রাম্প মোদিকে শুভেচ্ছা জানান ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে।
এক্স-এ পোস্ট করে মোদি লেখেন, “ধন্যবাদ, আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনার উষ্ণ শুভেচ্ছা ও ফোনের জন্য। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সার্বিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমিও সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আপনার উদ্যোগকে আমরা সমর্থন জানাই।”
ট্রাম্পও ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দারুণ ফোনালাপ হল। আমি তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তিনি অসাধারণ কাজ করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টায় সমর্থন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
এটি ছিল দুই নেতার মধ্যে ১৭ জুনের পর প্রথম কথোপকথন। উল্লেখ্য, রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতীয় আমদানির উপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ বিশেষভাবে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য। এতে দুই দেশের সম্পর্কে তীব্র টানাপোড়েন তৈরি হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প সুর নরম করে বলেছেন, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। তাঁর কথায়, “ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্কে কোনও অসুবিধা হবে না।”
মোদির জন্মদিনের প্রাক্কালে উষ্ণ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে মঙ্গলবার ইতিবাচক আলোচনাও হয়েছে। উভয় দেশই জানিয়েছে, বাণিজ্যিক মতপার্থক্য দূর করতে ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আলোচনার পথ খোলা হয়েছে।
ভারত-মার্কিন সার্বিক বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের আওতায় প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, জ্বালানি ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে পারস্পরিক অংশীদারিত্বের যৌথ উদ্যোগ চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে দুই নেতার বৈঠকে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল। মাঝখানে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে হঠাৎ করেই সুর চড়ান ট্রাম্প। সম্প্রতি ফের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন তিনি। এই অবস্থায় তাঁর চাপানো শুল্কনীতিতে ভবিষ্যতে কোনও পরিবর্তন হয় কিনা, সেই দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।