ভারতের অন্যতম ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ মাসুদ আজহারকে ঘিরে ফের পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী যোগ ফাঁস হল। পাকিস্তানের বালাকোটে গত সপ্তাহে আয়োজিত ধর্মীয় সম্মেলনে প্রচারিত এক ভিডিয়োতে জৈশ-ই-মহম্মদের শীর্ষ নেতা মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে যে, তারা পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার নামে সন্ত্রাসবাদকে আঁকড়ে ধরেছিল।
বালাকোটের গড়ি হাবিবুল্লা এলাকায় অনুষ্ঠিত ‘বার্ষিক মিশন মুস্তাফা সম্মেলন’-এ হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। মূলত নবীজির জীবন ও শিক্ষাকে সামনে রেখেই অনুষ্ঠান হলেও সেখানে ভারতবিরোধী ও জেহাদি স্লোগান উঠেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
সম্মেলনে বাজানো হয় জৈশ নেতা মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরির একটি ভিডিয়ো বক্তৃতা। ইলিয়াস জৈশের এক উচ্চপদস্থ সদস্য, যে ২০১৬-তে ভারতীয় সেনার পাঠানকোট বিমানঘাঁটি ও উরি সেনাশিবিরে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।
ভিডিয়ো বার্তায় ইলিয়াস বলে, “সন্ত্রাসবাদকে আঁকড়ে ধরে আমরা দিল্লি, কাবুল আর কান্দাহার পর্যন্ত লড়েছি পাকিস্তানের সীমানা রক্ষার জন্য। সব কিছু উৎসর্গ করার পর ৭ মে ভারতীয় সেনা বাহাওয়ালপুরে মৌলানা মাসুদ আজহারের পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করেছে।”
এই মন্তব্যে কার্যত সে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে মনে করছে দিল্লি। উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিল পহেলগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে জৈশের ন’টি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাহাওয়ালপুরে জৈশের সদর দফতরও ধ্বংস হয়। মাসুদ আজহারের পরিবার নিহত হওয়ার কথাও পাকিস্তানি মহল স্বীকার করেছে।
ভারত অসামরিক হতাহতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি জানিয়েছিল, সমস্ত লক্ষ্যবস্তু আগে থেকেই যাচাই করা হয়েছিল এবং প্রত্যেকটির সঙ্গে সরাসরি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যোগ ছিল।
মাসুদ আজহারকে ২০১৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে ঘোষণা করে। সে ২০০১ সালের সংসদ হামলা ও ২৬/১১ মুম্বই হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। ১৯৯৯-এ কান্দাহার বিমান অপহরণের ঘটনার পর তৎকালীন এনডিএ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসি-৮১৪ বিমানের যাত্রীদের মুক্তির বিনিময়ে ভারতের জেল থেকে মুক্তি পায় আজহার। তারপর থেকেই পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে সে।
ভারত বারবার পাকিস্তানকে জৈশ-প্রধান মাসুদ আজহার ও লস্কর-প্রধান হাফিজ সঈদকে হস্তান্তরের দাবি জানালেও ইসলামাবাদ তা এড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পাক নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো দাবি করেছিলেন, আজহার নাকি আফগানিস্তানে রয়েছে।
প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হচ্ছে, জৈশ নেতার প্রকাশ্য বক্তৃতা কি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে প্রত্যক্ষ মদতের অকাট্য প্রমাণ?
