বৃহস্পতিবার অনিল আম্বানি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করল সিবিআই। অভিযোগ, আম্বানির গ্রুপ কোম্পানি রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্স লিমিটেড ও রিলায়েন্স হোম ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইয়েস ব্যাংক এবং ব্যাংকের প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রানা কপূরের পরিবারের মালিকানাধীন কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে ভুয়ো লেনদেনের মাধ্যমে ২,৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চার্জশিট মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতে জমা পড়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অনিল আম্বানি অ্যানিল ধীরুভাই আম্বানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং রিলায়েন্স ক্যাপিটাল লিমিটেডের পরিচালক। তবে এ.ডি.এ গ্রুপের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিবিআই-এর চার্জশিটে অনিল আম্বানি ছাড়াও রানা কপূর, তাঁর স্ত্রী বিন্দু কপূর, মেয়ে রাধা কপূর ও রোশনি কপূরের নাম রয়েছে। এছাড়া আর.সি.এফ.এল, আর.এইচ.এফ.এল (এখন অথাম ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড), আর.এ.বি. এন্টারপ্রাইজেস প্রাইভেট লিমিটেড, ইমাজিন এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড, ব্লিস হাউস প্রাইভেট লিমিটেড, ইমাজিন হ্যাবিট্যাট প্রাইভেট লিমিটেড, ইমাজিন রেসিডেন্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং মরগ্যান ক্রেডিটস প্রাইভেট লিমিটেড-এর নামও রয়েছে। কোম্পানিগুলোকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সিবিআই জানিয়েছে, ২০২২ সালে ইয়েস ব্যাংকের প্রধান ভিজিল্যান্স অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল রানা কপূর, আর.সি.এফ.এল এবং আর.এইচ.এফ.এল-এর বিরুদ্ধে। তদন্তে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রানা কপূরের অনুমতিতে ইয়েস ব্যাংক আর.সি.এফ.এল-এর ২,০৪৫ কোটি টাকা এবং আর.এইচ.এফ.এল-এর ২,৯৬৫ কোটি টাকা নন-কনভার্টেবল ডিবেঞ্চার ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ করেছিল। অথচ ওই সময় কেয়ার রেটিংস স্পষ্ট জানিয়েছিল, এ.ডি.এ গ্রুপের আর্থিক অবস্থা খারাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
সিবিআই-এর দাবি, এই টাকা বহু স্তরের ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা আসলে সরকারি অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা। তদন্তে দেখা গেছে, রানা কপূর এবং অনিল আম্বানি একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। রানা কপূর তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইয়েস ব্যাংকের টাকা সমস্যাগ্রস্ত এ.ডি.এ গ্রুপের কোম্পানিতে ঢোকান। এর বদলে আম্বানি আর.সি.এফ.এল এবং আর.এইচ.এফ.এল থেকে রানা কপূরের পরিবারের লোকেদের কোম্পানিকে কম সুদে ঋণ ও বিনিয়োগের সুবিধা দেন। ফলে ইয়েস ব্যাংকের প্রায় ২,৭৯৬.৭৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয় এবং এ.ডি.এ গ্রুপ ও রানা কপূরের পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো লাভবান হয়।
তদন্তে আরও জানা গেছে, রিলায়েন্স ক্যাপিটালের আরেকটি সংস্থা রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডস, অনিল আম্বানির নির্দেশে, ২০১৭-১৮ সালে মরগ্যান ক্রেডিটস প্রাইভেট লিমিটেডে ১,১৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। এই কোম্পানিটি রানা কপূরের পরিবারের। এছাড়া রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডস, ইয়েস ব্যাংক থেকে এ.ডি.এ গ্রুপের ডিবেঞ্চার ২৪৯.৮ কোটি টাকায় কিনে। একই সঙ্গে তারা ইয়েস ব্যাংকের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এ.টি.১ বন্ডে ১,৭৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।
এই বন্ডগুলোর নির্দিষ্ট মেয়াদ ছিল না। সংকট তৈরি হলে এগুলোকে হয় শেয়ারে রূপান্তর করা যেত অথবা পুরোপুরি বাতিল করা যেত। সিবিআই বলেছে, এই বন্ড ছিল একেবারে সর্বনিম্ন স্তরের ঋণ, যেখানে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে
