সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
ফের সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে রাজ্যবাসী। শুধু রাজ্যের সাধারণ মানুষ নয় আজ সুপ্রিম কোর্টের মুখাপেক্ষী রাজ্যের হেভি ওয়েট নেতা-মন্ত্রীরাও। বিতর্কিত বা অযোগ্য বলে যারা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্দেশিত সেই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের স্কুলে রেখে দিয়েই মেধা তালিকায় অপেক্ষমান বা ওয়েটিং লিস্টে যারা ছিলেন তাদের চাকরি দিতে অতিরিক্ত পদ তৈরির প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। রাজ্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে এস এস সি দুর্নীতি মামলায় গঠিত বিচারপতির দেবাংশু বসাকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের এই নির্দেশ বহাল রাখে। বর্তমানে সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে বিচারাধীন। আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হবে কি হবে না তা নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। তাই এই সুপার নিউমেরারি পোস্ট বা অতিরিক্ত শূন্যপদ মামলায় দেশের শীর্ষ আদালতের দিকেই তাকিয়ে রাজ্য। উল্লেখযোগ্য ইতিমধ্যেই এই এসএসসি মামলায় প্রায় ২৬ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মী প্যানেল বাতিল করেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্ট যদি এই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখে তাহলে রাজ্য মন্ত্রিসভা সিবিআই তদন্তের আওতাধীন হবে। সেটি রাজ্য সরকারের পক্ষে মোটেই সুখকর হবে না বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা। এসএসসি মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন ” দাগি বা অযোগ্য ব্যক্তিদের স্কুলের চাকরিতে বহাল রেখে প্যানেল বহির্ভূতভাবে বাকি অযোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের স্কুলের চাকরির আওতায় নিয়ে আসতে অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরিতে রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে রাজ্য মন্ত্রিসভা বা রাজ্য সরকার দেয় এড়াতে পারে না। যেহেতু এই মামলায় সিবিআই তদন্ত করছে তাই রাজ্য মন্ত্রিসভা কেও সিবিআই তদন্তাধীন হতে হবে।”
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০২২ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন রাজ্য সরকারকে জানায় OMR সিটি র্যঙ্ক জাম্পিংয়ের কারণে ৫২৬১ চাকরিপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে অবিলম্বে স্কুল পরিচালনা বা পঠন পাঠন স্বাভাবিক রাখতে
অপেক্ষমান তালিকা থেকে নিয়োগের জন্য
৫২৬১ পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশন আরো জানায় যে মেধা তালিকার বাইরে থেকে যে ৭৫১ জন চাকরি প্রার্থীকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগ করেছিল তা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। যদিও নিয়োগ বাতিলের কথায় কর্ণপাত না করে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর অতিরিক্ত ৫ হাজার ২৬১ ০ পদ তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানায়। এই নিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল, রাজ্য অর্থ এবং আইন দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ ক্রমে ওই অতিরিক্ত শূন্য পদ সৃষ্টিতে সায় দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। ২০২২ সালের ৫ মে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অতিরিক্ত ৫২৬১ শূন্য পদ তৈরির সিদ্ধান্ত মঞ্জুর করে রাজ্য মন্ত্রিসভা। সেই মোতাবেক রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের উপসচিব হাইকোর্টকে রিপোর্ট দিয়ে জানান ৫২৬১ শূন্যপদ সৃষ্টি করেছে রাজ্য সরকার। তার ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি চায় শিক্ষা দপ্তর। যদিও রাজ্য মন্ত্রিসভা বা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি হাইকোর্ট। তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই গোটা ঘটনায় সরকারি নির্দেশিকা খারিজ করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ বহাল রাখে। এবার সুপ্রিম কোর্টের পালা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ আর চূড়ান্ত শুনানিতে কি পর্যবেক্ষণ বা নির্দেশ দেন সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।
