সীমান্তে ফের উত্তপ্ত পরিস্থিতি। কোনও ধরনের উস্কানি ছাড়াই ফের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করল পাকিস্তান। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত কুপওয়ারা, বারামুলা এবং আখনুর সেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবর্ষণ করেছে পাকিস্তানি সেনারা। পাল্টা জবাব দিয়েছেন ভারতীয় সেনার জওয়ানরাও, যথাযথ কঠোরতায় মোকাবিলা হয়েছে সীমান্তে।
সূত্রের খবর, শুধু সোমবার রাতেই নয়, গত কয়েক দিন ধরেই পাক সেনার তরফে একাধিকবার নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে পুঞ্চ এবং কুপওয়ারা জেলার বিভিন্ন অংশে টানা চারদিন ধরে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনেও তার প্রভাব পড়ছে।
এই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ ভারতীয়। ওই ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান কঠোর হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানি নাগরিকদের দেওয়া ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগও তুলে ধরেছে ভারত।
পাকিস্তান অবশ্য একদিকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় পহেলগাম হামলার ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’-এর কথা বলছে। কিন্তু সীমান্তে পাক সেনার একের পর এক যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন সেই দাবিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলছে। একদিকে শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং তদন্তের কথা বলা, অন্যদিকে সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ানো— এই দ্বিচারিতায় স্পষ্টই ধরা পড়ছে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্য।
দিল্লির সাউথ ব্লক ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, সীমান্তে যেকোনও ধরনের উস্কানি বরদাস্ত করা হবে না। পাক সেনার প্রতিটি উস্কানির কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে সেনা সূত্রে খবর। কূটনৈতিক চাপ এবং সামরিক প্রতিরোধ— দুই দিক থেকেই পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে ভারত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান হয়তো অভ্যন্তরীণ সংকট এবং আন্তর্জাতিক চাপে ঘুরপথে উত্তেজনা ছড়িয়ে কাশ্মীর ইস্যুকে আবার আন্তর্জাতিক মহলে টেনে আনতে চাইছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নিজেদের ভূখণ্ড এবং সীমান্তের নিরাপত্তায় কোনওরকম আপস করা হবে না।
এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে আরও কিছুদিন উত্তেজনা বজায় থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেনা ও প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
