ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবারও জমেছে উত্তেজনার কালো মেঘ। একদিকে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জেরে ভারত সরকারের কড়া সিদ্ধান্ত—দেশে আর ঠাঁই নেই পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য। অন্যদিকে, পাকিস্তান নিয়েছে এক রহস্যজনক অবস্থান—নিজেদের নাগরিকদেরই ফিরতে দিচ্ছে না দেশে! আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে এখন দাঁড়িয়ে অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছেন বহু পাকিস্তানি, যাদের ফিরিয়ে দিতে চায় ভারত, কিন্তু ফেরাতে নারাজ পাকিস্তান।
২৬ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় জঙ্গি হামলার পরেই ভারত সরকার সব পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। নির্দেশ দেওয়া হয়, যারা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন, তাদের পাকিস্তানে ফিরে যেতে হবে অবিলম্বে। কিন্তু সীমান্তে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবটা আরও জটিল। কারণ পাকিস্তান সীমান্তের দরজা বন্ধ রেখেছে, ফেরত নিচ্ছে না নিজের দেশের মানুষদেরই।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আটারি সীমান্তে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন পাকিস্তানি নাগরিকরা। কেউ এসেছেন হরিদ্বারের দর্শনে, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ আবার আত্মীয়ের খোঁজে—সবাই ফিরতে চাইছেন নিজেদের দেশে। কিন্তু পাকিস্তান যেন এক কোল্ড শোল্ডার দিচ্ছে নাগরিকদেরই। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই সীমান্ত রেখেছে সিল করা।
পাকিস্তানের নাগরিক সূরজ কুমার জানালেন, “ভোর ছ’টায় এসেছিলাম মাকে নিয়ে। ৪৫ দিনের ভিসা ছিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দরজা বন্ধ। পাকিস্তান আমাদের নিচ্ছে না।” একই অভিজ্ঞতা হর্ষ কুমারের, যিনি বলেন, “পাঁচটা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা আমাদের কোনও কথাই শুনছেন না। আমরা উদ্বিগ্ন ও অসহায়।”
এই তালিকায় রয়েছেন এমনও কেউ, যাদের দাম্পত্য সম্পর্ক জুড়ে রয়েছে দুই দেশের নাগরিকত্ব। যেমন নামরা নাম নামে এক ভারতীয় মহিলার স্বামী পাকিস্তানি নাগরিক। তিনি লাহোরে ফিরে যেতে চাইলেও, পাকিস্তান তাঁর প্রবেশ আটকে দিয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২৬ এপ্রিল সার্ক ভিসা এবং ২৯ এপ্রিল মেডিক্যাল ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানিদের ক্ষেত্রে। ফলে অনেকেই আইনি দিক থেকে সীমাবদ্ধতায় পড়ছেন। কিন্তু পাকিস্তান কেন নিজের নাগরিকদেরও ঢুকতে দিচ্ছে না—সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কূটনৈতিক মহলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের এই অবস্থান হয়তো এক কৌশলগত চাপ তৈরির চেষ্টা, যাতে ভারত আন্তর্জাতিক মহলে বিব্রত হয়। আবার কেউ কেউ বলছেন, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগেই পাকিস্তান এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এদিকে মানবিক দিক থেকে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অসুস্থ, বয়স্ক, শিশুরাও সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকলেও, ওপারের দরজা এখনও বন্ধ। দুই দেশের রাজনৈতিক শীতলতা যেন সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও ঠান্ডা ও কঠিন করে তুলছে।
