অভিজিৎ বসু
একুশে জুলাই এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বঙ্গ সফরকে ঘিরে রাজ্যে জুড়ে রাজনীতির ময়দান আবার বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। মোদীর বঙ্গ সফরের ঠিক বাহাত্তর ঘণ্টা পরেই বাংলার ‘দুর্গা’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সেই বিখ্যাত শহীদ স্মরণের ডাক। যে শহীদ এর রক্তে একদিন কলকাতার রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। যে শহীদের বাড়ির লোকেদের বুকফাটা আর্তনাদে গোটা রাজ্যে জুড়ে হৈ চৈ হুল্লোড় পরে গেছিল একদিন। সেই শহীদকে সম্বল করেই রাজ্য জুড়ে ক্ষমতার পালা বদল ঘটে একদিন অনেক পরে ২০১১ সালে, মা মাটি আর মানুষের সরকার।
একদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আহবান রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের জোয়ার আসবে বলে তাঁর উদাত্ত কণ্ঠের ডাক দেওয়া দু হাত তুলে। হাইটেক সিটি ব্যাঙ্গালোর এর মতোই উন্নয়ন হবে বীরভূমি বলে খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত বীরভূম জেলার। এই বার্তার মধ্যে অন্য কোনোও ইঙ্গিত দিলেন কি না প্রধানমন্ত্রী সেটা তিনিই একমাত্র জানেন। কারণ বীরভূমের বাঘ এর গলায় আজ উল্টো সুর। আর সেই আশা নিয়েই রাজ্যের বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে মা দুর্গার মূর্তি দিয়ে দুর্গা বধের ডাক দেবার জন্য বার্তা দেবার কথা বলেন তাঁকে। যাতে এই কেন্দ্রীয় দল বহুধা বিভক্ত বিজেপির একটু সুবিধা হয় ২৬ এর বিধানসভার ভোটের আগে এই রাজ্যে।
কারণ বিজেপির ঘরের ছেলে এক সময়ের ডাকাবুকো ডন আর বৈঠক করা নেতা যাঁর নেতৃত্বে সব থেকে ভাল ফল হয়েছে এই রাজ্যে এক সময়ে কেন্দ্রীয় দল বিজেপির। বিজেপির সেই নেতা এখন নতুন সংসার পেতে এখন তাতেই মনোনিবেশ করেছেন তিনি মায়ের কথা ভেবে। তাঁর জীবনের মন্ত্র এখন দল নয়, পার্টির নয় তিনি এখন যোগী থেকে ক্রমেই ভোগী হয়ে উঠেছেন ধীরে ধীরে একদম মা মাটি আর মানুষের মতোই। আর অন্যদিকে একুশে জুলাই এর আগে রাজ্যের মাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদী মিথ্যাচার করছেন বলে তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে সাফাই দেওয়া হচ্ছে জোর গলায়।
বেশ ভালই লাগে এই রাজ্যের মানুষের এইসব তথাকথিত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি দেখে। একশো দিনের টাকা নেই, রাজ্যের কোনো কর্মসংস্থান নেই, গুরগাঁও, পুনে আর ব্যাঙ্গালোর হলো বাঙালির এই রাজ্যের সদ্য পাশ করা যুবক যুবতীদের একমাত্র কাজের ঠিকানা। সেখানে শুধুই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি আর তথ্য দিয়ে ঢিল মারামারি চলে জোরকদমে ভোটের বাদ্দি বাজলেই। যে বদ্দির বাদ্যি ইতিমধ্যে বেজে গেছে আমাদের রাজ্য জুড়ে। দিকে দিকে এই বার্তা রটে গেছে যে সে আসছে পাঁচ বছর পর।
লক্ষ্মী ভান্ডারের টাকা নেবার পর, সবুজ সাথীর সাইকেল নেবার পর, কন্যাশ্রী কন্যার টাকা নেবার পর, কেন্দ্রের প্রকল্পের আওতায় নানা সামাজিক প্রকল্পে কাজ হওয়ার সুবিধা পাওয়ার পর, আয়ুষ্মান প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে বলে গেরুয়া নেতাদের রাজ্যজুড়ে ঝড় তোলার পর। মোদীই একমাত্র ভরসা, উন্নয়নের জোয়ার আনার মূল কারিগর তিনিই একথা বলেই বাজার ধরার চেষ্টা আর কি। সেই অব কি পার দুশো পার এর আওয়াজ ছাড়াই। দেশের এই অবস্থা কবে যে ঠিক হবে কে জানে। উত্তর থেকে দক্ষিণ এখন শুধুই ব্যস্ততা যে করেই হোক গেরুয়া ঝড় তুলে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করা। দেশের প্রাচীন এই দলকে নির্বাচনে একদম ধরাশায়ী করে টিম টিম করা দুটো তিনটে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা আঞ্চলিক দলকে প্রাধান্য দিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে রাখা। সে আম আদমি পার্টি হোক বা তৃণমুল কংগ্রেস হোক।
এটাই বোধহয় দুর্গা মূর্তির মাহাত্ম্য। যে দুর্গাকে মোদী মাথায় তুলে নিয়ে গেলেন এই রাজ্যে থেকে। তিনি জানেন আঞ্চলিক দলকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসকে দুর্বল করো রাজ্যে। তার শক্তি ক্ষয় করো। তাহলেই যে তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ীকে হারিয়ে কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়ে নতুন ভারত তৈরি করে নিজের মূর্তি স্থাপন করতে পারবেন। যা তাঁকে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও বড় করে তুলবে। সেখানে দেশের মানুষ এর জন্য সত্যিকারের উন্নয়ন, দেশের মানুষ এর জন্য ভাবনা সুপরিকল্পিত চিন্তা আর নির্দিষ্ট কাজ না করেও যে তথ্য দিয়ে হাত নেড়ে ফুল ছুঁড়ে কর্পোরেট সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে দিব্যি সুখেই বেঁচে থাকা যায় বছর বছর ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে।
সেখানে এই অঙ্গ রাজ্যের দুর্গাকে না হয় একটু ফুল দিলেন তিনি। এতদিন ধরে জয় শ্রী রাম ধ্বনি দিয়েও ভোটবাক্সে সাড়া মেলেনি তাই ২৬ এর ভোটের আগে লাইন বদল মোদীর। এখন তিনি শরণাপন্ন দূর্গা আর কালীর। নতুন ইষ্ট দেবতাকে নিয়ে ২৬ এর ভোট বৈতরণী পার করার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর। খারাপ কি একদিকে মা মাটি মানুষ আর অন্য দিকে পদ্মের হাসি দুইয়ে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে যেনো চারিদিক জুড়েই। শুধু ভোট এলেই একটু চিৎকার চেঁচামেচি আর উন্নয়নের তথ্য দিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করা দুই পার্টির। তারপর আবার পাঁচ বছর দিব্যি সুখেই দিনযাপন। মাটির মানুষদের ভবিষ্যৎ কি হলো সেটা নিয়ে ভেবে আর লাভ কি। জয় পদ্মের জয়, জয় মা মাটি আর মানুষের জয়।
