ভারত বিভাগের ভয়াবহতার স্মরণে “পার্টিশন হররস রিমেমব্র্যান্স ডে” নামে স্কুলগুলির জন্য একটি বিশেষ মডিউল প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও প্রশিক্ষণ কাউন্সিল (NCERT)। তবে এই মডিউল প্রকাশের পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
মডিউলে বলা হয়েছে, দেশভাগ কোনো একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং তিনটি শক্তির সম্মিলিত ফল। জিন্না, যিনি বরাবরই দেশভাগের পক্ষে প্রচার করেছেন। কংগ্রেস, যারা দেশভাগ মেনে নিয়েছিল, এবং মাউন্টব্যাটেন, যাঁকে দেশভাগ কার্যকর করতে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল।
মডিউলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দেশভাগের ফলে কাশ্মীর একটি নতুন নিরাপত্তা সমস্যায় পরিণত হয়। তখন থেকেই আমাদের প্রতিবেশী দেশ এই সমস্যাকে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে আসছে।
এই মডিউলকে ঘিরে কংগ্রেসে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, “এই নথি সত্যকে চাপা দিচ্ছে। এটি পুড়িয়ে ফেলা উচিত। দেশভাগের জন্য মূল দায়ী ছিল হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগের মধ্যে থাকা ‘চক্রান্ত’।”
পবন খেরা আরও বলেন, “এই দেশের জন্য আসল বিপদ আরএসএস। ১৯৩৮ সালে প্রথম হিন্দু মহাসভাই দেশভাগের ধারণা তুলে ধরে, পরে ১৯৪০ সালে জিন্না তা পুনরাবৃত্তি করেন।”
এই মডিউলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি ও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে, যা মূল পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে পড়ানো হবে।
মডিউলে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে মহম্মদ আলী জিন্না বলেন, “হিন্দু ও মুসলমান দুই ভিন্ন সম্প্রদায়। তাদের বসতি, দার্শনিক চিন্তা, সামাজিক রীতিনীতি এবং সাহিত্য আলাদা।”
এছাড়া মডিউলে দাবি করা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার প্রথমে ভারতকে একত্রিত রাখতে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু কংগ্রেস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
মডিউলে সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের একটি উদ্ধৃতিও রয়েছে: “ভারতের পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ, দেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে ভাগ করাই ভালো ছিল।”
গান্ধীর অবস্থান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি দেশভাগের বিরোধিতা করেছিলেন, কিন্তু কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত প্রতিরোধ করতে গিয়ে হিংসাকে প্রশ্রয় দিতে চাননি।
শেষ পর্যন্ত, জওহরলাল নেহরু ও প্যাটেল দেশভাগ মেনে নেন। পরে গান্ধীও ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে দেশভাগ মেনে নেওয়ার জন্য রাজি করান।
মডিউলে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের তারিখ এগিয়ে আনেন। মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করেছিলেন যে ১৯৪৮ সালের জুনে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, কিন্তু পরে তা এগিয়ে এনে ১৯৪৭ সালের আগস্টে নিয়ে আসেন।
মডিউল অনুসারে, দ্রুত সীমান্ত নির্ধারণের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক জায়গায় ১৫ আগস্টের পরেও মানুষ জানত না তারা ভারতে আছে না পাকিস্তানে রয়েছে।
এই নতুন মডিউলকে ঘিরে কংগ্রেস ও এনসিইআরটি-র মধ্যে সংঘাত আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইতিহাসের ব্যাখ্যা এবং কে ভারতের বিভাজনের জন্য দায়ী, তা নিয়ে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

