শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেই বাংলাদেশমুখী হয়ে পড়েছে চিন। বারবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ও বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চিন সফর ক্রমেই সেই ছবি স্পষ্ট করেছে। গত মার্চে মুহাম্মদ ইউনূসের বেজিং সফরে বাংলাদেশে তিস্তা নদীসহ জলসম্পদ ক্ষেত্রে চিনের যুক্ত হওয়াটায় সিলমোহর পড়ে যায়। তিস্তা মেগা প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যেই চিনের কাছে ৬৭০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছে ইউনূস প্রশাসন। জানা যাচ্ছে চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
তিস্তা মেগা প্রকল্প নিয়ে টানাপোড়েন আজকের নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ ১২টি দেশ বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্ক বা আইপিইএফ–এ অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও চিন চাইছে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি। শেখ হাসিনার সময়কালে ‘কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বা তিস্তা মেগা প্রকল্পে ভারত ও চিন দুই দেশ আগ্রহ দেখালেও দিল্লির পাল্লা ছিল ভারী। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিন সফরে গিয়েও জানিয়ে দিয়েছিলেন যে চিন প্রস্তুত থাকলেও আমি চাই এই প্রকল্প ভারত করুক।
তবে হাসিনা পরবর্তী জামানায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চিনের সখ্য বেড়ে যাওয়ায় এই প্রকল্প এখন চিনমুখী। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের খরচ ধরা হয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার বা ৯১৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)। এর মধ্যে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬৭০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে চিনের কাছে চাওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ আসবে বাংলাদেশের সরকারি কোষাগার থেকে। ২০২৬ সালে কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ও চিন পারস্পরিক সম্মতিতে এগোলেও ডিজাইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এই তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য তিন কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে রয়েছে বর্ষায় তিস্তা অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বর্ষার আগে ও পরে নদীভাঙন কমানো এবং গরমকালে জলের প্রবাহ বৃদ্ধি। আর এখানেই বড় সঙ্কটে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে যত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হোক না কেন গরমে ভারত না ছাড়লে নদীর জল বাড়বে না। অর্থাৎ দরকার তিস্তা জলবন্টন চুক্তি। এবং সেই চুক্তি ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
চিনের সঙ্গে হতে চলা তিস্তা প্রকল্প শিলিগুড়ি করিডরের কাছে হওয়ায় তা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সেখানে চিনের উপস্থিতি দিল্লি মেনে নেবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রথম আলো-য় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ -এর সভাপতি মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত এ এন এম মুনিরুজ্জামান জানিয়েছেন যে এমন সংবেদনশীল ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভাল। এই প্রকল্পের জন্য কোনও অন্তর্বর্তী নয়, দরকার মানুষের রায়ে নির্বাচিত সরকার।
