কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান থেকেই বেআইনি অস্ত্র কারবারের অভিযোগ। রাজ্যের এসটিএফের হাতে গ্রেফতার ডাকসাইটে অস্ত্র দোকান এন সি দাঁ অ্যান্ড কোং-এর ৩ মালিক। অভিযোগ, ক্যানিংয়ের জীবনতলা, খড়দহের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় উদ্ধার ও বাজেয়াপ্ত হওয়া বেআইনি অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে এই দোকানের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দোকানে হানা দিয়ে ৪১টি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এসটিএফের দাবি, বাজেয়াপ্ত একনলা ও দোনলা বন্দুকগুলির কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
মহানগরীতে এন সি দাঁ অ্যান্ড কোং তাদের দোকান খুলেছিল সেই ১৮৩৫ সালে। তাদের সেই শতাব্দী প্রাচীন দোকানেরই নাম বারে বারে জড়িয়েছে শহর কিংবা শহরতলি থেকে বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্তের প্রেক্ষিতে। মহানগরীতে ব্রিটিশ আমল থেকে আরও বেশ কয়েকটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরেই সন্দেহ, এসটিএফ-এর বাজেয়াপ্ত করা বন্দুকগুলি নিরাপদ হেফাজতের জন্য এন সি দাঁ অ্যান্ড কোং দোকানে জমা করা হয়েছিল এবং বন্দুকগুলির মালিকরা সেগুলি আর সংগ্রহ করেননি। যার জন্যে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
এসপ্ল্যানেড ক্রসিংয়ের কাছে লেনিন সরণিতে অবস্থিত ১৭৯ বছর বয়সী আশুতোশ (এটি) দাঁ অ্যান্ড কোং একজন আগ্নেয়াস্ত্রের ডিলার। তাঁর বক্তব্য, নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে ডিলারদের কাছে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা রাখা যায়। আর সেটাই কাজে লাগিয়ে অনেকই অস্ত্র জমা রাখেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও বেশ কয়েকজন সেগুলি আর ফিরিয়ে নিতে চান না। গোটা বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানাতেও হয়। নিতে হয় আদালতের ছাড়পত্র। সেসব ঝক্কি কাটাতেই লেনিনি সরণির আশুতোষ দাঁ অ্যান্ড কোং বন্দুক জমা রাখার পরিষেবা ৫ বছর আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। অস্ত্র মালিকদের না নেওয়া বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র এখনও তাদের দোকানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ টি দাঁ অ্যান্ড কোং-এর এক অধিকর্তা।
জওহরলাল নেহরু রোডে অবস্থিত আর এক শতাব্দী প্রাচীন দোকান ইস্ট ইন্ডিয়া আর্মস কোং। এরা প্রতি মাসে মাত্র ২০০ টাকা ভাড়ায় আগ্নেয়াস্ত্র জমা রাখার পরিষেবা প্রদান করে। এখন, প্রায় ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র তাদের হেফাজতে রয়েছে। দোকানের একজন কর্মচারী বলেন, “এই আগ্নেয়াস্ত্র, বেশিরভাগ শটগান এবং রাইফেলই আমাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। জমা দেওয়ার সময়, আমরা লাইসেন্সটি পরীক্ষা করি এবং তারপর জমাকারীকে একটি রসিদ দিই। ফেরত দেওয়ার আগে, আমরা লাইসেন্সটি বৈধ কিনা তা পরীক্ষা করি। অন্যথায়, মালিককে ফের রিনিউ করাতে হবে এবং তারপরে আমাদের কাছে আসতে হবে। জমা দেওয়া বন্দুকগুলি ফেরত না নিলে আমাদের জায়গার সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। আমরা পুলিশকে এ বিষয়গুলি অবহিত করতে থাকি।”
কমবেশি ১৫০ বছর পার করা এসপ্ল্যানেডের দোকান, জে বিশ্বাস অ্যান্ড কোংও জমা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। “যে আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ফেরত নেওয়া হয় না সেগুলি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” দোকানের পঞ্চম প্রজন্মের ডিলার এস কুমার বলেন। অস্ত্র আইন অনুসারে, ডিলাররা কোনও আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করতে পারে না এমনকি যদি তার মালিক তা ফেরত না নেয়। এরপর ডিলারকে পুলিশ গুদামে রাখার জন্য আদালতে যেতে হয়, ডালহৌসির এস কে ভুঞ্জা অ্যান্ড সন্সের আরেক ডিলার বলছেন এই কথা। সব মিলিয়ে বিবাদী বাগের এন সি দাঁ অ্যান্ড কোং-এর অস্ত্র করাবারে জড়িত থাকার অভিযোগ ঘিরে এখন সরগরম মহানগরীর অস্ত্র বিপণিগুলি।
