ফেসবুক, ইউটিউব-সহ ২৬টি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ হয়েছে নেপালে। সরকারের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরেও ওই সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়নি। সে কারণেই নেপালের কেপি শর্মা ওলি সরকার ২৬ টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ। বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিসের গুলিতে অন্তত ১৫ জন প্রতিবাদীর প্রাণ গিয়েছে বলে খবর। আহত হয়েছেন শতাধিক বিক্ষোভকারী। অভিযোগ, সেদেশের সংসদ ভবনেও বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়। তাতেই বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঠমাণ্ডু শহরে জারি হয়েছে কারফিউ। নামানো হয়েছে সেনা। একাধিক জায়গায় পুলিস কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় ও রবার বুলেট ছোড়ে বলে অভিযোগ।
শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার কারণেই কি এই অশান্তি? নেপালের রাজনৈতিক মহল অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কেপি শর্মা ওলি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, ওলি সরকার বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে প্রথম থেকেই তৎপর। দীর্ঘদিনের সেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একেবারে লাভার মতো বেরিয়ে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের উপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা মূলত কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যা এখন একটি বৃহত্তর দুর্নীতি বিরোধী গণআন্দোলনের চেহারা নিয়েছে।
পাশাপাশি বিরোধীরা মনে করছে, সামাজিক মাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার ভিন্নমত দমন করতে চাইছে। বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যকলাপ দমন করতে চাইছে সরকার।
এই বিক্ষোভ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে নেপালের তরুণ প্রজন্ম। যা ওলি সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেপালে তরুণ প্রজন্মের প্রায় দেড় কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছত্রিশ লক্ষেরও বেশি। আজকের দিনে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই ব্যবসা করেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। জীবন-জীবিকা বিপন্ন হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। সে কারণেই তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন।
উজান রাজভাণ্ডারি নামে ২৪ বছরের এক যুবক বলেছেন, শুধু সোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ হয়েছে বলেই প্রতিবাদ নয়, নেপালে দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইকসামা তুমর্ক নামে বছর কুড়ির এক ছাত্রী বলেছেন, ওলি সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে এই সরকার। দেশের নেতা মন্ত্রীদের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়দের ভবিষ্যৎ যখন উজ্জ্বল তখন কেন তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে? তাই আমরা এই সরকার বদল চাই।
পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী ওলি। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, মানুষের বাক স্বাধীনতার অধিকার কোনওভাবেই খর্ব করা হবে না। একইসঙ্গে সরকারের দাবি, একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রীতিমতো মানুষের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে অনেকেই টাকা পয়সা খোওয়াচ্ছেন।
