গায়ক, গীতিকার তথা কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহের পর এবার ভেসে উঠল দেশের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম। নেপালে দুর্নীতিবিরোধী ‘জেনারেশন-জেড’ আন্দোলনের জেরে ওলি সরকারের পতনের পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রায় চার ঘন্টার ভার্চুয়াল বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সুশিলার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
বুধবার এই বৈঠকের আগেই এক সাক্ষাৎকারে ভারত প্রসঙ্গে ইতিবাচক মন্তব্য করে সুশীলা বলেন, দুই দেশের সরকারের পারস্পরিক সম্পর্ক আলাদা হতেও পারে, কিন্তু ভারত-নেপালের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ও ঐতিহাসিক।
৭৩ বছর বয়সী কার্কি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “আমি মোদিজিকে প্রণাম জানাই। তাঁর সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা রয়েছে। ভারত সবসময় নেপালকে সাহায্য করেছে। ছোটখাটো মতভেদ হতেই পারে, তবে জনগণের সম্পর্ক সবসময় দৃঢ়।” তিনি আরও আশ্বস্ত করেন, নেপালে অবস্থানরত ভারতীয়রা নিরাপদে আছেন এবং নিহত বিক্ষোভকারীদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবেন।
কার্কি স্মৃতিচারণ করে বলেন, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে আকৃষ্ট হন। স্থানীয় মানুষ তাকে আত্মীয় বলে মনে করেছেন এমন উপলব্ধির কথাও বলেন তিনি। বিরাটনগরের বাসিন্দা হিসেবে সীমান্তবর্তী ভারতের বাজারে নিয়মিত যাওয়া-আসার অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন সুশীলা।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে নেপাল জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে কাঠমান্ডুর সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ একাধিক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং দুই শতাধিক আহত।
পরিস্থিতির জেরে মঙ্গলবার নেপালের সরকারের পতন হয়। এরপর সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে জেন-জেড আন্দোলনের নেতৃত্ব সুশীলা কার্কির নাম অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রস্তাব করে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা একমত হন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত যুবকরা নেতৃত্বে থাকবে না। কার্কির নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই তাঁকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
সুশীলা কার্কি কে?
•১৯৫২ সালের ৭ জুন বিরাটনগরে জন্ম সুশীলা কার্কির। তিনি মহেন্দ্র মোরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ (১৯৭২), বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তর (১৯৭৫) এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি (১৯৭৮) লাভ করেন।
•১৯৭৯ সালে আইন পেশায় প্রবেশের পর তিনি ২০০৭ সালে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন। ২০০৯ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১০ সালে স্থায়ী বিচারপতি হন। ২০১৬ সালে তিনি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।
•তাঁর মেয়াদকালে অন্তর্বর্তী ন্যায়বিচার ও নির্বাচন সংক্রান্ত বহু ঐতিহাসিক রায় দেন তিনি। ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা হলেও আদালতের নির্দেশ ও জনচাপের চাপে তা প্রত্যাহার করা হয়।
•কার্কির স্বামী দুর্গাপ্রসাদ সুবেদী নেপালি কংগ্রেসের একজন প্রখ্যাত যুবনেতা ছিলেন।
নেপালের এই তথাকথিত ‘জেন-জেড’ আন্দোলনকারী আসলে কারা, সেই নিয়ে কিন্তু ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। ভাইরাল ভিডিয়োতে মঙ্গলবার বলেন্দ্র শাহ-এর নাম পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে এসেছিল। বুধবার উঠে এল সুশিলা কার্কির নাম। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ওলির জায়গায় বর্তমানে দেশের শাসনভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেল। তাঁর প্রতিশ্রুতি মতো বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বুধবার বৈঠক হলেও, কারা প্রকৃত আন্দোলনকারী, কাদের সঙ্গে বৈঠক হল, সে বিষয়ে কিন্তু খোলসা করে জানানো হয়নি সেনাবাহিনীর তরফে।