নদিয়ার শান্তিপুরের বড় গোস্বামী পাড়ার একাদশ শ্রেণির ছাত্র মেঘজিৎ হালদার এআই-নির্ভর এই আধুনিক যুগে নিজ হাতে প্রায় দেড় ফুটের একটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে মৃৎশিল্প রক্ষার বার্তা দিয়েছেন। প্রযুক্তির দৌরাত্ম্যে যেখানে মানুষ ধীরে ধীরে মাটির গন্ধ ভুলতে বসেছে, সেখানে একজন ছাত্রের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক।
ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ভালবাসা ছিল মেঘজিতের। ধীরে ধীরে সেই ভালবাসা রূপ নেয় মাটির সঙ্গে এক গভীর সম্পর্কের। প্রথমে ছোট ছোট মূর্তি, এরপর ধাপে ধাপে বড় প্রতিমা তৈরি শুরু করে সে। মাত্র আড়াই বছর বয়স থেকেই তার হাতে দেখা যায় সৃজনশীলতার ছাপ। চার বছর ধরে সে নিজের বাড়িতেই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আসছে। এবছরও প্রায় এক মাস ধরে দেড় ফুট প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সে।
মেঘজিৎ মনে করে, এআই দিয়ে ছবি আঁকা যায় ঠিকই, কিন্তু প্রতিমা তৈরি করা যায় না। ঠাকুর গড়ার যে অনুভূতি, তা শুধুই হাত ও মাটির ছোঁয়ায় পাওয়া যায়। মৃৎশিল্প শুধু শিল্প নয়, এ এক আত্মিক সংযোগ। তাই নতুন প্রজন্মকে মাটির এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করার ডাক দিয়েছে সে। তার মা স্বাধীনতা হালদার বলেন, ছোট থেকেই মেঘজিৎ অন্যরকম। পড়াশোনার চেয়েও মাটির মূর্তি নিয়ে তার আগ্রহ বেশি। মাঝে মাঝে পড়াশোনার জন্য বকাঝকা করি ঠিকই, কিন্তু ও যাতে এই কাজটা চালিয়ে যেতে পারে, সেই চেষ্টাই করি।
মেঘজিতের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, প্রযুক্তির দুনিয়াতেও যদি মন থেকে ইচ্ছা থাকে, তবে শিল্পের প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তার মতো ছাত্রদের হাত ধরেই হয়ত আবার ফিরবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের সুদিন, আর নতুন প্রজন্ম বুঝবে, মাটি শুধু ঠাকুর গড়ে না, গড়ে ভবিষ্যৎও।
