সম্প্রতি “দ্য বেঙ্গল ফাইলস” সিনেমা নিয়ে বিতর্কের পর, দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সংঘ এ বছরের দুর্গাপুজোতে তুলে ধরছে সম্প্রীতি আর মিলনের বার্তা। লেক ভিউ রোডের এই পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ওই সময় দাঙ্গার আগুনে জ্বলছিল কলকাতা। সেই সময় শান্তি ফিরিয়ে আনতে ও মানুষকে একত্রিত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামী আর সমাজকর্মীরা এই পুজোর সূচনা করেন।
সেই সময় পুজো শুরু করেছিলেন শরৎ বসু, লীলা রায়, অনিল রায়, মেঘনাদ সাহা, যদুনাথ সরকার এবং আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। লীলা রায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তিনি ‘সমাজসেবী সংঘ’ নামটি ঠিক করেন এবং তিনিই প্রস্তাব দেন দুর্গাপুজোর মাধ্যমে সব ধর্মের মানুষকে একত্রিত করার।
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অরিজিৎ মৈত্র জানিয়েছেন, “আমাদের পুজো শুরু হয়েছিল অশান্ত সময়ে মিলনের বার্তা নিয়ে। আজও সেই বার্তাই সবচেয়ে জরুরি। আমাদের পূর্বপুরুষরা দাঙ্গার সময় মুসলিম শ্রমিকদের উদ্ধার করে নিরাপদে ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন। তখন আর্ট ডেকো স্টাইলে অনেক বাড়ি তৈরি হচ্ছিল, সেই শ্রমিকদের রক্ষা করাই ছিল মূল লক্ষ্য।” তিনি আরও জানান, তাঁর দাদু বীরেন মৈত্র ছিলেন ক্যালকাটা কেমিক্যাল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
এই বছর পুজো মণ্ডপের পাশাপাশি পুরো পাড়াকে সাজানো হবে পুরোনো দিনের মতো। আয়োজকরা জানিয়েছেন, কেএমসির সঙ্গে কথা হয়েছে। বিবেকানন্দ পার্কের উল্টো দিক থেকে শরৎ বসু রোড পর্যন্ত লেক রোডের যে অংশ পড়ছে, সেটাই সাজানো হবে। এখানে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের পনেরোটি বাড়ি এখনও রয়েছে, যেগুলো আর্ট ডেকো নকশায় তৈরি। সেগুলো আলোকসজ্জায় সাজানো হবে।
আয়োজকরা বলছেন, পুরনো শিল্পকর্মগুলো পুনরায় ব্যবহার করা হবে এবং কেএমসিকে অনুরোধ করা হয়েছে পাড়ার বাগানগুলোও ঠিক করে দিতে। সমাজসেবী সংঘের এই উদ্যোগে একদিকে যেমন পুরোনো দিনের কলকাতার চেহারা ফুটে উঠবে, তেমনই মিলন আর সম্প্রীতির বার্তাও ছড়িয়ে যাবে।
