কলকাতার বউবাজারের সোনার গয়নার বাজার থেকে কয়েক কদম এগোলেই সরু গলি। সেখানে ঢুকলেই চোখে পড়ে অন্ধকার, সঙ্কীর্ণ ঘর। সেখানেই বসে আছেন কয়েকজন নেপালি মহিলা। তাঁদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে এমন এক পেশা, যা তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজেরা বেছে নেননি।
নেপালে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে বিক্ষোভের ঢেউ, তার প্রভাব এসে পড়েছে শত শত কিলোমিটার দূরে কলকাতার বউবাজারের রেড লাইট এলাকায়, যা ‘হাড়কাটা গলি’ নামে পরিচিত। এখানে নেপালি মহিলারা টেলিভিশন বা মোবাইলের পর্দায় নজর রাখছেন দেশের পরিস্থিতির দিকে। তবে তাদের কাছে এই খবর নিছক সংবাদ নয়, এক নতুন অনিশ্চয়তা যা তাঁদের একাকিত্ব ও টিকে থাকার লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলছে।
১২ বছর আগে প্রতারিত হয়ে কলকাতায় এসে যৌনপল্লিতে আটকা পড়া ৩৪ বছর বয়সি রীতা (নাম পরিবর্তিত) বলেন, “যখন দেখি নেপালের তরুণরা তাঁদের অধিকার আদায়ে পথে নামছে, তখন একদিক থেকে ভালো লাগে। কিন্তু আমার ছোট ভাই চাকরি হারিয়েছে, মায়ের কাছে টাকাও ফুরিয়ে গেছে। তাই আমাকে এখানেই আরও বেশি কাজ করে রোজগার করতে হবে।”
বউবাজারে কর্মরত বহু নেপালি যৌনকর্মী প্রতি মাসে বাড়িতে টাকা পাঠান। নেপালে কারফিউ ও বিক্ষোভের কারণে পরিবারগুলোর অবস্থা শোচনীয় হওয়ায়, কলকাতার এই মহিলারাই হয়ে উঠেছেন পরিবারের একমাত্র ভরসা।
৪২ বছর বয়সি আরেকজন যৌনকর্মী, যিনি ২০০৫ সালে এখানে আসেন, বলেন, “আমরা সবাই আশা করি একদিন বাড়ি ফিরে গিয়ে পরিবার নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাকি জীবন কাটাব। কিন্তু এই অশান্তি আমাদের স্বপ্নকে আরও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। দেশে ফিরলেও সেই দারিদ্র্যই আবার অপেক্ষা করছে।”
দশকের পর দশক ধরে নেপালি মহিলারা খোলা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছেন, ভালো জীবনের আশায়। কিন্তু শেষমেষ তারা আটকা পড়ছেন যৌনপল্লির অন্ধকার জগতে। দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব ও কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ—এসবই এই চক্রকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা আজকের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের মূল ইস্যু।
কলকাতার সোনাগাছির মতো এলাকাতেও নেপালি যৌনকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আরও বহুগুণ বেড়েছে।
