এআই ১৭১ বিমান দুর্ঘটনার পর ‘পাইলটের ভুল’ তত্ত্বকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। এ নিয়ে দায়ের হওয়া এক জনস্বার্থ মামলায় শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকার, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এবং এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)-র কাছে জবাব তলব করেছে।
গত ১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের পথে টেক অফের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১, যার ফলে ২৬০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ঘটনায় বিমানের ১২ জন ক্রু ও ২২৯ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়, একমাত্র এক যাত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। বিমানের ক্র্যাশে আরও ১৯ জন মারা যান, কারণ বিমানটি সরাসরি একটি মেডিকেল কলেজের হস্টেলে আছড়ে পড়েছিল।
এএআইবি জুলাই মাসে প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করে, ককপিটে ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল ও ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দারের মধ্যে কথোপকথনে ধরা পড়েছে, একজন প্রশ্ন করেছিলেন “তুমি কেন কেটে দিলে?” জবাবে অপরজন বলেছিলেন, “আমি দিইনি।” এর ভিত্তিতে দুর্ঘটনার কারণ ‘পাইলটের ভুল’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা শুরু হয়।
এনজিও ‘সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন’ জনস্বার্থ মামলা করে অভিযোগ জানিয়েছে, প্রাথমিক রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হয়েছে, যা নাগরিকদের জীবনের অধিকার, সমতার অধিকার এবং সত্য তথ্য জানার অধিকারের পরিপন্থী।
আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “দুর্ঘটনার পর ১০০ দিনেরও বেশি কেটে গেছে, অথচ কেবল একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়নি আসলে কী ঘটেছিল বা ভবিষ্যতে কী সতর্কতা নেওয়া দরকার। ফলে আজও যেসব যাত্রী বোয়িং বিমানে ভ্রমণ করছেন, তাঁরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দুর্ঘটনার তদন্তে যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে, তার মধ্যে তিনজনই ডিজিসিএ-র কর্মরত সদস্য। এতে স্পষ্ট স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। “যে সংস্থা নিজেই প্রশ্নের মুখে, তার কর্মচারীরাই আবার তদন্ত করবে, এটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য?” প্রশ্ন করেন ভূষণ।
আদালত জানায়, ন্যায্য তদন্তের দাবি বোধগম্য হলেও সব তথ্য প্রকাশ্যে আনা তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “যদি কাল বলা হয়, কোনও এক পাইলট দায়ী, তবে তাঁর পরিবারের ওপর বিরাট প্রভাব পড়বে।”
ভূষণ অভিযোগ করেন, রিপোর্ট সরকারি দফতরে পৌঁছনোর আগেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল খবর প্রকাশ করে দেয় যে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটদের দায়ী করা হবে। এর ফলে সর্বত্র ‘পাইলটের ভুল’ তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে। “ওরা অভিজ্ঞ পাইলট ছিলেন, অথচ বলা হল ইচ্ছাকৃতভাবে ইঞ্জিনের ফুয়েল সাপ্লাই বন্ধ করে দেন,” তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি কান্ত বলেন, “এগুলো খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য। এ ধরনের তদন্তে গোপনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এআই ১৭১ দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখনও চলছে। জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর জবাব শোনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
