সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের বাকি এখনো গোটা একটি বছর। তবে ভুয়ো ভোটার বা ভোটার তালিকায় কারচুপিকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই রাজ্যে ভোট রাজনীতি সরগরম করেছে তৃণমূল- বিজেপি। গতকাল নেতাজি ইনডোরের কর্মী সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দীভাষি বহিরাগতদের রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম ঢুকিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখলের অভিযোগ করেন। কাঠগড়ায় তুলেছিলেন নির্বাচন কমিশনকে। এমনকি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও প্রশ্ন তোলেন। এর পাল্টা হিসেবে আজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী 14 জন দলীয় বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরে দরবার করেন। এমনকি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশের সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেও সরাসরি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। শুভেন্দুর সাফ কথা, দিল্লির নির্বাচনী ফলাফল দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন। তাই নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুর সহ যেখানে যেখানে হিন্দি ভাষী অবাঙালি ভোটার রয়েছেন অথবা মতুয়াদের টার্গেট করে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম নির্মূল করার চক্রান্ত করছেন। সে কারণেই রাজ্যের একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি বিরোধীদল বিজেপি তো বটেই এমনকি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এ ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে দাবি বিরোধী দলনেতার।
মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত সংবিধানিক পোস্টকে কালিমালিপ্ত করছেন বলেও অভিযোগ বিরোধী দলনেতার।
শুভেন্দু জানান,
রাজ্যের বহু জায়গায় ভোটার তালিকা কে আবর্জনা মুক্ত করার ডাক দিয়ে তৃণমূল ভোটার তালিকা নিয়ে মিটিং করছে, এটা বেআইনি। শুভেন্দু আরো বলেন, রাজ্যের নটি জেলায় ভুয়ো ভুতুড়ে ভোটের নাম ঢুকানো হয়েছে। আমরা চব্বিশে লোকসভার আগে ১৫ হাজার পাতার কপি নির্বাচন কমিশনার জমা দিয়েছি সেখানে ১৬ লক্ষ ভুয়ো ভোটার আছে। নির্বাচন কমিশন ৮ লক্ষ বাদ দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর সঙ্গে কথা বলার পর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী হরিয়ানা গুজরাট ভোটারদের নিয়ে যা বলেছেন তা সর্বজন মিথ্যা ইলেকশন কমিশন বলেছে কিছু ত্রুটির জন্য এপিক কার্ডের নম্বর এক হয়ে গেছে। কিন্তু নাম আলাদা। ওটা ঠিক হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে 20 হাজার হিন্দি ভাষী লোক আছে তাদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে যাতে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া যায়। আমরা সেটা হতে দেব না বলে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর।
বিরোধী দলনেতার আরো অভিযোগ, বিজেপি নয় পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় ভুতুড়ে ভোটারের নাম তুলেছে তৃণমূল। উদাহরণ হিসেবে তিনি রোহিঙ্গা, বাংলাদেশী এমনকি বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিদের কথাও উল্লেখ করেন। শুভেন্দুর দাবী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইনডোরে, যে নয়টি নাম উল্লেখ করে ভুতুড়ে ভোটারের তথ্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের হিন্দিভাষী ভোটার, সনাতনী হিন্দু,রাজবংশী এবং মতুয়াদের টার্গেট করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করছে তৃণমূল। কারণ হিসেবে শুভেন্দু জানান গত লোকসভা নির্বাচনে এই জনগোষ্ঠীর ভোটাররা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে কথা বুঝেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল রাজনৈতিক অভিসন্ধি করে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত এই ভুল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা, নির্বাচন কমিশন এবং ভোটার তালিকার কাজের যুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঙুল তোলার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর মন্তব্য “ভোটার তালিকায় হস্তক্ষেপ করা বা তা নিয়ে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে– কোথাকার হরিদাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?” রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক পদে যারা রয়েছেন তাদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সেই জেলাশাসকদের আনুগত্য এবং নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত । পাল্টা যুক্তি শুভেন্দু অধিকারীর ।শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কথা বলায় নয়, ভোটার তালিকার কাজে নিযুক্ত আধিকারিক এমনকি খোদ দেশের মুখ্য নির্বাচন নিয়োগ ও কাজ নিয়োগ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয় এ রাজ্যের মুখ্য সচিব গত শনিবার রাজ্যের সমস্ত ভিডিও এইচডি ও এবং জেলা শাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ভোটার তালিকা নিয়ে কথা বলেছেন এবং তাদের ধমক দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের একজন মুখ্য সচিব এভাবে ভোটার তালিকা নিয়ে কথা বলতে পারেন না এবং ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ধমকাতে পারেন না এটাও সংবিধান কে চ্যালেঞ্জ করার সমান দাবি শুভেন্দুর। আর এই সব কিছু নিয়েই আজ সকালেই দিল্লির নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
এদিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দিব্যেন্দু দাসের সঙ্গে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে দেখা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভোটার তালিকা তৈরীর কাজে যুক্ত সরকারি আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিব যেভাবে ধমক দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পাশাপাশি সেই সমস্ত সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে তাদেরকে বরাবর দিতে হবে। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কে বিরোধী দলনেতা। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর কাছে তিনি আরো জানতে চান গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বা তার ওপরে বারবার বিজেপি নির্বাচন কমিশনের কাছে রোহিঙ্গা ভুয়ো ভোটারের নাম ভোটার তালিকা রয়েছে বলে দাবি করলেও কেন কোন পদক্ষেপ করেনি নির্বাচন কমিশন অথবা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তর। অন্যান্য রাজ্যে সাধারণ নিয়ম মেনে যা খুশি করা হোক বাংলার নির্বাচনের জন্য আলাদা করে এস ও পি জারি করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। এমনকি আধার ও এপিক কার্ড এর সংযুক্তিকরণ এর মাধ্যমেই ভোটাররা এ রাজ্যে যাতে ভোট দেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে কমিশনকে বলেও জানান তিনি।