দক্ষিণ আমেরিকার বাদুড় থেকে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস (Coronavirus) পাওয়া গেছে, যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, এই নতুন ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হলে তা নতুন মহামারির (Pandemic) রূপ নিতে পারে। গবেষণায় জানা গেছে, বাদুড় থেকে পাওয়া এই ভাইরাসটি আগের SARS-CoV-2 ভাইরাসের সঙ্গে কিছু মিল রয়েছে, যা কোভিড-১৯ (COVID-19) মহামারির জন্য দায়ী ছিল।
গবেষকদের মতে, দক্ষিণ আমেরিকার একটি বিশেষ প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে নতুন এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এই ভাইরাসটি ACE2 রিসেপ্টরের মাধ্যমে মানুষের কোষে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যা কোভিড-১৯ ভাইরাসও করেছিল। এই কারণে বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ভাইরাসটি যদি মানুষে সংক্রমিত হয় তবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মহামারি পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই নতুন করোনা ভাইরাসটির গঠন SARS-CoV-2 এর মতোই। ভাইরাসটি বাদুড়ের মধ্যে সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম এবং মানব কোষে সংক্রমণের জন্য প্রস্তুত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি এখনই মানবদেহে সংক্রমিত না হলেও ভবিষ্যতে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই এই পরিস্থিতিকে বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, বাদুড়ের মধ্যে পাওয়া এই নতুন ভাইরাসটির চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে এমন ধরনের পরিবর্তন এনেছে, যা মানব কোষে সহজে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। গবেষকরা বলছেন, “যদি ভাইরাসটি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়, তবে এটি কোভিড-১৯ এর মতোই মারাত্মক হতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই নতুন ভাইরাসের ওপর নজর রাখছে এবং সংক্রমণের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। WHO-র এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা এই ভাইরাসের গঠন এবং সংক্রমণের ধরন সম্পর্কে আরও বিশদে গবেষণা করছি। মানুষে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই পরিস্থিতিতে গবেষকরা জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বন্য প্রাণীর সংস্পর্শ এড়ানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে এই বাদুড়ের উপস্থিতি রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগেভাগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। গবেষকরা ইতিমধ্যে এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু করেছেন এবং এর প্রতিরোধে কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন।
এই নতুন ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে এই ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।