সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি কর্মসমিতির বৈঠকও করলেন বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়া বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য ক্ষেত্র কেমন আছে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণে কি কি কাজ করা হয়েছে সে সম্বন্ধে বিশদে খোঁজখবরও নেন নতুন উপাচার্য। এমনকি ইউনেস্কো স্বীকৃতি পাওয়ার পর হেরিটেজস্থল লাগোয়া বেশ কিছু নির্মাণকাজ ও অসংগতি যা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কও শুরু হয়েছে তা নিয়েও জানতে চান তিনি। একে প্রবীরবাবু বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তার উপর বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ পদে বসেই বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে তার এই উদ্যোগে আশার সঞ্চার করেছে প্রবীণ আশ্রমিক তথা গুণমুগ্ধদের। গত কয়েক বছর ধরে যে অচলাবস্থা বা রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশ্বভারতীর অঙ্গনকে বারবার বিতর্কের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এবার কি তার বদল হবে? সেই আশাতেই বুক বেঁধেছে শান্তিনিকেতন।
২০২৩ সালে বিশ্বভারতীর একাংশকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে ঘোষণা করে ইউনেস্কো। ২০২৪ সালে বিশ্বভারতী এই হেরিটেজ সংরক্ষণের জন্য একটি সেল তৈরি করে এবং বিশ্বভারতী ও ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বক্ষণের মাধ্যমে হেরিটেজ সংরক্ষণের কাজও শুরু হয়। সংরক্ষণের কাজ চলার মধ্যেই বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসে। বিশেষ করে হেরিটেজ সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ কাজ নিয়ে যথেষ্ট হইচই শুরু হয়। বিতর্ক এতটাই চরমে পৌঁছয় বিশ্বভারতীর কাছে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানতে চায় ইউনেস্কো। শুধু হেরিটেজ সংক্রান্ত বিতর্ক বা পাঁচিল তুলে বিশ্বভারতীকে শান্তিনিকেতনের সার্বিক পরিবেশ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্তই নয়, গত কয়েক বছরে বিশ্বভারতী প্রশাসনের কাজ এমনকি উপাচার্য-শিক্ষকদের সঙ্গে পড়ুয়াদের বচসা-সংঘর্ষ, উপাচার্যকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি,উপাচার্যের বাড়ির সামনে রাতভর ঘেরাও-অবস্থান এমনকি সশস্ত্র পুলিশি ঘেরাটোপে রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতনে উপাচার্যের চলাফেরা বিশ্বভারতী তথা শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য ও গরিমার ক্ষেত্রে এক অশনি সংকেত বলে মনে করেন আশ্রমিকরা। প্রকৃতি ও মানবাত্মার মেলবন্ধনের যে শিক্ষাদর্শে বিশ্বভারতীর অধিষ্ঠান সেখানে এই ছবি বাস্তবিকই বিতর্ক উসকে দেয়। বিশ্বাত্মার সঙ্গে ভারতীয় শিক্ষার অপূর্ব মেলবন্ধনের শিকড় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিত সেখানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের রসায়ন যে এই পর্যায়ে পৌঁছতে পারে তা ভাবনার অতীত। বিশ্বভারতীর সম্মান ধুলোয় মেশানো সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের দায় কার? বিশ্বভারতী কি এখন শুধুই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়? সেখানে কি রবীন্দ্রনাথের কোনও স্থান নেই ? সেখানে প্রকৃতি ও মানবাত্মার কোনও স্থান আছে কি? নাকি থাকবে শুধুই রাজনীতি? এই প্রশ্নগুলো যখন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল ঠিক তখনই নতুন উপাচার্যের এই উদ্যোগ নতুনভাবে প্রাণসঞ্চার করেছে রবিঠাকুরের শিক্ষাঙ্গনে। নতুন স্থায়ী উপাচার্য কি পারবেন বিশ্বভারতীকে যাবতীয় বিতর্ক থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে? শান্তিনিকেতনে প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তির ঐতিহ্য বজায় রাখার কাজে প্রবীর কুমার ঘোষের যাবতীয় উদ্যোগ এখন নজরবন্দি বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথা শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক ও গুণমুগ্ধরা।