পরিতোষ সাহা:বীরভূম
প্রত্যেকেই শিশু।কিন্তু তাদের নামকরণ হয়নি।কারণ,তাদের কারো বাবা নেই,তো কারো মা।এমনকি বাবা,মা থাকলেও কোন কোন পরিবার দুঃস্থ।অর্থের অভাবে এ রকম অসহায় শিশুদের “ছাটিয়ার”(মুখেভাত বা অন্নপ্রাশন) অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি।ফলে সেই সব শিশু আদিবাসী সমাজের সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারত না।কারণ,আদিবাসী সমাজে “ছাটিয়ার” অনুষ্ঠান এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক রীতি।আর সেই রীতি মেনেই শিশুদের নামকরণ করা হয়।কিন্তু বিভিন্ন কারণে যাদের হয়না,আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করতে পারে না।এ রকম ১৮০ জন আদিবাসী শিশুর নামকরণের বাস্তবতা পেল তিনদিনের অনুষ্ঠানে।
বীরভূমের রামপুরহাট থানার হরিনাথপুর গ্রাম মূলতঃ আদিবাসী অধ্যুষিত। আদিবাসী সমাজের রীতি,শিশু জন্মগ্রহণের পর নামকরণের জন্য “ছাটিয়ার”(মুখেভাত বা অন্নপ্রাশন) করতে হয়।কিন্তু এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবার দুঃস্থ।আবার কারো মা অথবা বাবা নেই।ফলে তাদের “ছাটিয়ার” না হওয়ায়,নামকরণও হয়নি।কিন্তু বাবা-মায়েরা নিজেদের মত করে তাদের বাচ্চাদের নামকরণ করলেও, আদিবাসী সমাজে তা গুরুত্বহীন। ফলে এই সমস্ত শিশুরা বড় হলে তাদের বিয়ে বা অন্য কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।এরকমই ১৮০ জন আদিবাসী শিশুদের নিয়ে গণ ছাটিয়ার অনুষ্ঠান করা হলো গ্রামে।
আদিবাসী সমাজে “ছাটিয়ার” অনুষ্ঠানে খাওয়ানোর রীতি চলে আসছে।সেটি খুব বড় আকারের না হলেও,এই রীতিকে মান্যতা দিতেই হবে।আর এই রীতির মধ্য দিয়েই হয় নামকরণের পর্ব।কিন্তু হরিনাথপুর গ্রামের ১৮০ জন শিশুর খোঁজ পান এলাকার ব্যবসায়ী জহরুল ইসলাম।তাঁরই উদ্যোগে, গ্রামেই এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।চলে তিনদিন ধরে নানান অনুষ্ঠান,খাওয়া-দাওয়া।রবিবার ছিল এই অনুষ্ঠানের শেষদিন।মেনুতে ছিল ভাত,ডাল,তরকারী,মাছ,চাটনি,মিষ্টি,দই, পাঁপড়।প্রায় ৭০০ আদিবাসী মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।জহরুল ইসলামের উদ্যোগে খুশি গ্রামের মানুষ।অভিভাবক কীর্তি মুর্মু বলেন,“আমরা ছেলেদের নামকরণ করেছিলাম।কিন্তু অর্থের অভাবে ছাটিয়ার অনুষ্ঠান করতে না পারায় চিন্তায় ছিলাম।বিষয়টি বনহাট অঞ্চলের জহিরুল ইসলাম কে জানানো হয়।তাঁরই উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই আমাদের শিশুরা সামাজিক স্বীকৃতি পেল।” এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দিশম আদিবাসী গাঁওতার রাজ্য সভাপতি রবীন সোরেন।তিনি বলেন,“ খুব ভালো উদ্যোগ।আদিবাসী সমাজে এই রীতি আছে।অনেকেই বিভিন্ন কারণে তা করতে পারেন না।তিনি যে এই উদ্যোগ নিয়েছেন,তা খুব ভালো।”