ক্ষমতায় এসেই একের পর এক নজরকাড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প।প্রায় প্রতিদিনই সে সব নিয়ে তর্ক-বিতর্কের বান ডেকে যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।এবার সেইরকমই এক ব্যাতিক্রমী সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার ফেডারেল সরকারের থেকে শিক্ষা বিভাগকে তুলে দেওয়ার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। এর ফলে এবার থেকে শিক্ষা খাতে আর কোনও ব্যয় বরাদ্দ করবে না আমেরিকার কেন্দ্রীয় প্রশাসন। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে এই আদেশ “একবার এবং চিরতরে ফেডারেল শিক্ষা বিভাগকে নির্মূল করা শুরু করবে।” হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে ডেস্কে বসে থাকা স্কুল ছাত্র – ছাত্রীদের মাঝেই বিশেষ অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর করার পরে ট্রাম্প আদেশটি তুলে ধরেন এবং হাসেন।
তবে ট্রাম্পের এই ভাবনা যে একবারে নতুন বা আকাশ থেকে পড়া তা কিন্তু নয়।শিক্ষা বিভাগকে ‘নির্মূল’ করার ভাবনা আমেরিকান ডানপন্থীদের প্রায় এক দশকের পুরনো লক্ষ্য।তাঁরা চান প্রতিটি রাজ্য বা স্টেট ফেডারেল সরকার থেকে মুক্ত স্কুল পরিচালনা করুক। অর্থাৎ এখন থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার থাকবে আমেরিকার প্রদেশ বা স্টেটগুলোর উপরে। স্থানীয় প্রশাসনই এ বার আমেরিকার শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে মাথা ঘামাবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, “এটি (এই ব্যবস্থা) আমাদের কোনও উপকার করছে না, আমরা তা রাজ্যগুলিতে শিক্ষা ফিরিয়ে দেব যেখানে এটি প্রাপ্য।
শিক্ষা দফতর বন্ধ করে দেওয়া ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মধ্যেই ছিল।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এলন মাস্কের অতি কঠিন সংস্কার পরিকল্পনা। তাতে বার বার প্রশাসনিক ব্যয়ে লাগাম পরানোর কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে এটি এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।এই আদেশে শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমাহনকে “শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাজ্যগুলিতে শিক্ষা কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার” নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।প্রথম বার প্রেসিডেন্ট হয়েই শিক্ষা দফতরে তালা ঝোলাতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় সে বার কাজটি করা যায় নি। তবে ডানপন্থী থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট এবং শিক্ষাবিদরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট চাক শুমার এটিকে ‘অত্যাচারী ক্ষমতা দখল’ এবং ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি’ বলে অভিহিত করেছেন।
আমেরিকার সিস্টেম অনুযায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে মার্কিন ফেডারেল সরকারের ভূমিকা সীমিত।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য মাত্র ১৩ শতাংশ তহবিল আসে ফেডারেল কোষাগার থেকে, বাকি অর্থসাহায্য করা হয় রাজ্য এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের তরফে। কিন্তু এরপরেও নিম্ন আয়ের স্কুল এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ফেডারেল তহবিলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কার্যকর করার ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য।
পাশাপাশি আর একটা দাবি উঠছে। ১৯৭৯ সালে আমেরিকার শিক্ষা দফতরকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল।এ বার তা বন্ধ করলেন ট্রাম্প।প্রশ্ন উঠেছে ১৯৭৯ সালে তৈরি এই শিক্ষা বিভাগ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এভাবে বন্ধ করা যায় না।