সংসদ হোক বা বিধানসভা, প্রশ্নোত্তর পর্বে সদস্যদের কোন প্রশ্নের উত্তর সরকারপক্ষের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা মন্ত্রকে সরাসরি ঠিকভাবে অথবা লিখিত আকারে উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু ব্যতিক্রম মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার। সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধীপক্ষের করা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লিখিত আকারে প্রশ্নকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় বিভাগের ওয়েবসাইটে ক্লিক করে তথ্যগুলি জেনে নিন। আর এখানেই আপত্তি তুলেছেন প্রশ্নকর্তা তথা রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন-এর। ডেরেকের মন্তব্য, ” সংসদকে মজার জায়গায় পরিণত করতে মোদি সরকারের নয়া উদ্যোগ প্রশ্নোত্তর পর্বে সরাসরি উত্তরের পরিবর্তে ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে বলছেন।”
গত ৮ আগস্ট রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন সরকারপক্ষের কাছে জানতে চান গত ৫ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞাপন বাবদ এবং টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রে প্রচার বাবদ কত খরচ করেছে? সংসদের
প্রশ্নোত্তর পর্বে এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে সোমবার লিখিতভাবে ডেরেক-কে উত্তর দিয়ে ডিটেক্টরেট অফ এডভার্টাইজিং এন্ড ভিস্যুয়াল পাবলিসিটি বা ডিএভিপি-র ওয়েবসাইটে দেখে নেওয়ার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগান। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জানান, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ কম্যুনিকেশন বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগের বিজ্ঞাপন দেয় যার খরচের বিশদ তথ্য ডিএভিপি-র ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর এধরনের উত্তরে বেজায় চটে যান রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা সংসদের ভিতরেই নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন ডেরেক ও ব্রায়েন। পরে একটি সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানান “উল্লিখিত ওয়েবসাইটের তথ্য দেখলে বোঝা যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসলে একজন পাবলিক রিলেশন মিনিস্টার।”
ডিএভিপি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে অর্থ্যাৎ ২০২০-২১ আর্থিক বছর থেকে ২০২৫ আগস্ট পর্যন্ত বিজ্ঞাপন ও প্রচার বাবদ ২৩২০.১৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কেন্দ্রের ৬৬টি মন্ত্রকের প্রতিটির জন্য গড়ে খরচ ৪৫৪ কোটি। গত পাঁচ বছরে যে খরচ ৮৪ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন ডেরেক ও’ ব্রায়েন ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস।
ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী
২০২০-২১ আর্থিক বছরে বিজ্ঞাপন বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করেছে ৩৪৯.২৪ কোটি টাকা
২০২১-২২ এ যা কমে দাঁড়ায় ২৭৪.৮৭ কোটিতে। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে তা ফের বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৭.৩৮ কোটি। তবে এই খতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ২০২৩-২৪ নির্বাচনী বছরে। বিজ্ঞাপন ও প্রচার বাবদ রেকর্ড ব্যয় ৬৫৬.০৮ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরেও খরচের ধারা অব্যাহত থাকে, ৬৪৩.৬৩ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে গত পাঁচ বছরে মোদি সরকার সরকারি কোষাগারের টাকায় প্রচারাভিযান ‘নয়া নজির’ গড়েছে তা বলাই বাহুল্য।