
প্রাকৃতিক দুর্যোগে উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় ঘিরে সরব রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আবহে ভোটারদের কাছে টানতে দু-পক্ষই মরিয়া। বিপর্যস্তদের পাশে দাঁড়াতে কোনওপক্ষই চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছে না।
তবে এরই মাঝে নাগরাকাটায় বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করতে গিয়ে একদল জনতার হাতে নিগৃহীত হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ও বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। বিজেপি এই ঘটনার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকেই সরাসরি দায়ী করেছে।
নাগরাকাটার ঘটনায় সরব হয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আতঙ্ক গ্রাস করেছে।’ উত্তরবঙ্গে থাকা তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে শুভেন্দুর হুঙ্কার, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপিকে এইভাবে ভয় দেখিয়ে আটকানো যাবে না। আপনার ভয় ও তোষণের রাজনীতি বাংলার জনগণের ঐক্য ও সাহসের কাছে পরাস্ত হবে।”
নন্দীগ্রামের পদ্ম বিধায়ক নাগরাকাটার ঘটনা ঘিরে একগুচ্ছ ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন সোশাল মিডিয়ায়। সেখানে লিখেছেন, ”তৃণমূলের সেই এক ‘সন্ত্রাসবাদ মডেল’, দেখুন কাদের ব্যবহার করা হয় আজকের নাগরাকাটায় সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষদের ওপর এই নির্মম প্রাণঘাতী আক্রমণ ঘটাতে।”

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য তাঁর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গলরাজ! আদিবাসী নেতা এবং উত্তর মালদহের ২ বারের সাংসদ খগেন মুর্মু নাগরাকাটায় তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাদের আক্রমণের শিকার। ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং ভূমিধসের পরে যাঁরা ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের বাংলা।”
দলের সাংসদ-বিধায়ক আক্রান্ত হওয়ায় সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, “আমাদের সাংসদ, বিধায়ক, রাজ্য নেতাদের উপর যে আক্রমণ হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র পুরোপুরি বিপন্ন। বাংলাদেশি মুসলিমদের উস্কে আমাদের সাংসদ এবং বিধায়কদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।”
সুকান্ত আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক পরিকল্পিত ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তার অজান্তে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে না।”
তৃণমূলের অবশ্য দাবি, “আজ যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিজেপির নিজের কর্মফল। যখন সাধারণ মানুষ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তখন বিজেপি নেতারা ১০টিরও বেশি গাড়ির কনভয় নিয়ে শুধুমাত্র ফটোশুটের জন্য এলাকায় গিয়েছিলেন, কোনও ত্রাণ কার্যক্রম ছাড়াই। বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের আচরণে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং ঘটনাটি ঘটে। এটি বিজেপির দীর্ঘদিনের অন্যায় ও মানুষের প্রতি অবহেলার ফল। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা শুরু থেকেই মাটিতে থেকে নিরলসভাবে মানুষকে সাহায্য করে চলেছেন । বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া যোদ্ধাদের মতো কেবল পোস্ট দিয়ে নয়, বাস্তবে পাশে থেকে।”
সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পাশাপাশি যখন টইটুম্বুর নদীগুলির জলস্তরও কমতে শুরু করেছে, তখন কিন্তু রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে ক্রমশই। মুখমন্ত্রীর ২ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে সেই উত্তাপ বাড়বে বই কমবে না। সোমবারের চাপানউতোর দেখে এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।