বিখ্যাত সাহিত্যতাত্ত্বিক ও দার্শনিক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নরওয়ের হলবার্গ পুরস্কার পাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী তাঁর গবেষণা ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে, আর সেই অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই সম্মান প্রদান করা হচ্ছে। হলবার্গ কমিটি বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালে এই সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করবেন অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক।
বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত এই পুরস্কার আর্টস ও হিউম্যানিটিজের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য প্রদান করা হয়। অধ্যাপক স্পিভাকের এই অর্জনকে গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বিশিষ্ট সম্মানের আর্থিক মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৫,১৫,০০০ ইউরো, যা ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৪.৬ কোটি টাকার কাছাকাছি।
নরওয়ের বেরজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জুন এক বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে আনুষ্ঠানিকভাবে হলবার্গ পুরস্কার প্রদান করা হবে। ওই দিন নরওয়ের যুবরাজ হাকোন তাঁকে এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মান তুলে দেবেন। ৮২ বছর বয়সি অধ্যাপক স্পিভাক এর আগেও বহু আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন, তবে হলবার্গ পুরস্কার তাঁর কৃতিত্বের তালিকায় এক নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।
হলবার্গ পুরস্কার জয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক অভিনন্দন বার্তা পোস্ট করেন।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ সম্মান অর্জন করেছেন। সাহিত্য ও দর্শনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে এর পাশাপাশি তিনি সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করে চলেছেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁর এই অসাধারণ কৃতিত্ব আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”
অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের জন্ম কলকাতায়, ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের পর উচ্চশিক্ষার জন্য কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের অন্যতম বিশিষ্ট অধ্যাপক। তাঁর সাহিত্য ও গবেষণা কর্ম ব্যাপকভাবে সমাদৃত—এ পর্যন্ত তিনি ৯টি গ্রন্থ রচনা করেছেন, পাশাপাশি বহু গুরুত্বপূর্ণ বই সম্পাদনা ও অনুবাদ করেছেন। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে তিনি নানা বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক অনন্য বিদ্বান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই পুরস্কার তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য ছাড়িয়ে বাংলা ও ভারতের জন্যও এক বিরল গৌরবের মুহূর্ত।
Leave a comment
Leave a comment